Date: November 23, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / আন্তর্জাতিক / কানাডায় ব্যাপক ভারতবিরোধী বিক্ষোভ শিখদের

কানাডায় ব্যাপক ভারতবিরোধী বিক্ষোভ শিখদের

September 27, 2023 01:05:38 PM   আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কানাডায় ব্যাপক ভারতবিরোধী বিক্ষোভ শিখদের

কানাডায় বসবাসরত শিখ ধর্মাবলম্বীদের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে দেশটির তিনটি শহরে বিক্ষোভ করেছেন কানাডীয় শিখরা। সোমবার রাজধানী অটোয়া-টরন্টো-ভ্যানকুভার— তিন শহরে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন শত শত শিখ ধর্মাবলম্বী।

কানাডায় ভারতের যে দূতাবাস ও কনস্যুলেট কার্যালয়গুলো রয়েছে, সেসব এই তিনটি শহরেই অবস্থিত।

দেশটির নাগরিক ও দেশটির শিখ ধর্মাবলম্বীদের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর নিহতের পর থেকে কানাডীয় শিখরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন— উল্লেখ করে টরন্টোতে বসবাসরত শিখ কমিউনিটির সদস্য জয় সিং হোথা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি পাঞ্জাবে। সেখানে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে এখানে এসে স্থায়ী হয়েছি। এখন দেখা যাচ্ছে— আমরা এখানেও নিরাপদ নই।’

টরন্টো বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অপর বিক্ষোভকারী হারপাল সিং গোসাল বলেন, ‘ভারতীয়রা সন্ত্রাসী। তারা ভ্যানকুভারে আমাদের ভাইকে হত্যা করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী (জাস্টিন ট্রুডো) পার্লামেন্টে যা বলেছেন, তাতে আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমরা অবিলম্বের এই হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

সোমবার রাজধানীসহ কানাডার যে তিন শহরে হওয়া বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের অনেকের হাতেই শিখ ধর্মাবলম্বীদের ঘোষিত পৃথক রাষ্ট্র খালিস্তানের পতাকা দেখা গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, খালিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দুই রাজনৈতিক গোষ্ঠী খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিসের কানাডা শাখা এই বিক্ষোভ সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিল।

ভারতের পরই যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিখ বসবাস করেন, তার নাম কানাডা। দেশটির ২০২১ সালের জনশুমারির তথ্য বলছে, প্রায় ৮ লাখ শিখ ধর্মাবলম্বী বসবাস করেন কানডায়।

হরদীপ সিং নিজ্জর ছিলেন কানাডার বসবাসকারী শিখদের একজন নেতা । ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলা থেকে দেশটিতে গিয়েছিলেন, পরে সেখানাকার নারিকত্বও অর্জন করেন তিনি।

এদিকে ভারতের একজন তালিকাভুক্ত ‘ফেরার’ সন্ত্রাসীও ছিলেন হরদীপ। ভারতের অন্যতম বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং ‘শিখস ফর জাস্টিস’ কানাডা শাখার নেতা ছিলেন তিনি। দু’টি সংগঠনই ভারতে নিষিদ্ধ। হরদীপকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করাতে আগ্রহী ছিল ভারত।

গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যানকুভার শহরের একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হরদীপ সিং নিজ্জর

এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সম্প্রতি ভারতকে সরাসরি দায়ী করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ১৮ সেপ্টেম্বর  সোমবার কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন।

কানাডার জন্য এই ঘটনাটি যে তীব্র অবমাননাকর, তা বোঝাতে গিয়ে পার্লামেন্ট ভাষণে ট্রুডো বলেন, ‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।’

ভারতের সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীন, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে, এই ঘটনা (হরদীপ হত্যা) সেই মৌলিক নিয়মনীতির পরিপন্থী।’

ট্রুডো পার্লামেন্টে এই অভিযোগ তোলার পরদিনই কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিসি উইং (র) কানাডা শাখার প্রধানকে বহিষ্কারাদেশ দেয় কানাডীয় সরকার।

এদিকে ট্রুডোর এই বক্তব্যের পর থেকে নজিরবিহীন টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছে কানাডা ও ভারত।ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে, সেই সঙ্গে ট্রুডোর বক্তব্য এবং ভারতীয় শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষুব্ধও হয়েছে দেশটি। ‘র’ কানাডীয় শাখার প্রধানকে বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার পরের দিনই পাল্টা ব্যবস্থা ভারতের কানাডার দূতাবাসের একজন জেষ্ঠ্য কূটনীতিকে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে নয়াদিল্লি।