ক্রিমিয়া উপদ্বীপ, রাজধানী মস্কো এবং রাশিয়ার একটি তেল ডিপোতে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তবে রাশিয়া বলেছে, রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে ক্রিমিয়াতে ইউক্রেনের সমন্বিত একটি আক্রমণকে ব্যর্থ করে দিয়েছে তারা।
এছাড়া ইউক্রেনীয় ড্রোন রাজধানী মস্কোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং এর জেরে রাজধানীতে বিমান চলাচল ব্যাহত করেছে। অন্যদিকে ড্রোন হামলায় রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি তেল ডিপোতে আগুন ধরে যায়। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে অধিকৃত ক্রিমিয়ায় রাশিয়ান সামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং রাশিয়ান নৌবাহিনীর কৃষ্ণসাগর নৌবহরের অবকাঠামোর ওপর একের পর এক হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। মূলত গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলে মস্কোর যুদ্ধ চালানোর শক্তিকে দুর্বল করার জন্য এই হামলা চালাচ্ছে কিয়েভ।
অন্যদিকে যুদ্ধের সম্মুখ সময় বলে পরিচিত এলাকা থেকে অনেক দূরে রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরেও ইউক্রেনীয় আক্রমণ বেশ বেড়েছে। মস্কোর মেয়র বলেছেন, রোববার ভোরে রাজধানী মস্কো অঞ্চলে কমপক্ষে দুটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
রয়টার্স অবশ্য রোববারের এই হামলা ও হামলা ব্যর্থ করে দেওয়ার রিপোর্টগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি এবং কিয়েভ থেকেও হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
শনিবার রাতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি ওলেক্সি দানিলভ কিয়েভের মিত্রদের অস্ত্র সরবরাহের গতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ করার এটাই একমাত্র উপায়।
ইউক্রেনস্কা প্রাভদা নিউজ সাইটে মতামতধর্মী লেখায় দানিলভ লিখেছেন, ‘উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, রাশিয়ান কৃষ্ণসাগর নৌবহরকে সম্পূর্ণ বা আংশিক নির্মূল করতে হবে এবং এটিই চলমান যুদ্ধ থেকে রাশিয়াকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খোঁজার জন্য প্রক্রিয়াটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত করতে পারে।’
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভিন্ন দিক থেকে ক্রিমিয়াকে লক্ষ্য নিক্ষেপ করা অন্তত ছয়টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপের দেওয়া এই বিবৃতিতে অবশ্য ইউক্রেনীয় হামলায় ক্রিমিয়া উপদ্বীপে কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কিনা, তা বলা হয়নি।
অন্যদিকে মস্কো অঞ্চলে একটি ড্রোন ইস্ত্রা জেলায় এবং আরেকটি রামেনস্কি জেলার ওপর ধ্বংস করা হয়েছে বলে মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন টেলিগ্রামে বলেছেন। ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ থেকে কোনও হতাহতের বা ক্ষতি হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে এই ড্রোন হামলার ঘটনায় মস্কোর প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে অন্তত ৩০টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে এবং ছয়টি বাতিল করা হয়েছে বলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে। মূলত সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ড্রোন হামলার ঘটনায় রুশ বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এই ধরনের পদক্ষেপ বেশ ঘন ঘনই নিতে বাধ্য হয়েছে।
এছাড়া রোববার ভোরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়ায় একটি তেল ডিপো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলায় একটি জ্বালানি ট্যাংকে আগুন ছড়িয়ে পড়লেও পরে তা নিভিয়ে ফেলা হয় বলে আঞ্চলিক গভর্নর জানিয়েছেন।
রাশিয়ার ওরিওল অঞ্চলের গভর্নর আন্দ্রেই ক্লিচকভ টেলিগ্রামে বলেছেন, ‘হামলায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। জরুরি পরিষেবার সকল দল ওই অঞ্চলে কাজ করছে।’
অবশ্য ওই তেলের ডিপোটিতে সরাসরি ড্রোন আঘাত হেনেছে নাকি ড্রোনের ধ্বংসাবশেষে আঘাত করেছে তা তিনি উল্লেখ করেননি।