ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। স্পিডবোট ব্যবহার করে এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে চালানো এই হামলায় উপদ্বীপের একটি শিপইয়ার্ডে আগুন ধরে যায়। এছাড়া হামলায় দুটি জাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও তিনটি স্পিডবোট দিয়ে হামলা চালানোর পর ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের সেভাস্টোপল শিপইয়ার্ডে বুধবার ভোরে আগুন লেগেছে এবং দুটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে এক বিবৃতিতে রুশ এই মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের নিক্ষেপ করা ১০ ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে সাতটি ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয়েছে এবং তিনটি বোটই একটি টহল জাহাজ ধ্বংস করে দিয়েছে।
মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘শত্রুর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দুটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই দুটি জাহাজে সেখানে মেরামতের কাজ করার জন্য রাখা হয়েছিল।’
অন্যদিকে ক্রিমিয়ার বৃহত্তম শহর সেভাস্তোপলের মস্কো-নিযুক্ত গভর্নর মিখাইল রাজভোজায়েভ টেলিগ্রামে বলেছেন, ভোরে চালানো এই হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘হামলাস্থলে জরুরি পরিষেবার সকল সংস্থা কাজ করছে। শহরে বেসামরিক অবকাঠামোর প্রতি এখন আর কোনও বিপদ নেই।’
রয়টার্স বলছে, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই শিপইয়ার্ডে রাশিয়ান কৃষ্ণসাগর নৌবহরের জাহাজ এবং সাবমেরিন তৈরি ও মেরামত করা হয়ে থাকে। কৃষ্ণসাগরের এই নৌবহর থেকে ইউক্রেনে অসংখ্য ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
এদিকে বন্দরের অবকাঠামো বলে মনে হচ্ছে এমন স্থানের আগুনের ছবি পোস্ট করেছেন রাজভোজায়েভ। রাশিয়ান টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোও এই অবকাঠামোতে বিশাল অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও এবং আরও বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছে।
রয়টার্স অবশ্য স্বাধীনভাবে হামলা, অগ্নিকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির এসব খবর যাচাই করতে পারেনি। এছাড়া ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মূলত ইউক্রেন প্রায় কখনোই প্রকাশ্যে রাশিয়ার অভ্যন্তরে বা ইউক্রেনের রুশ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে হামলার দায় স্বীকার করে না। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটি বলে আসছে, রাশিয়ার সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হওয়া কিয়েভের পাল্টা আক্রমণকে সহায়তা করে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপের দখল নেয় রাশিয়া। অবশ্য বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মস্কোর এই দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি।
এছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে রাশিয়া বলেছে, রুশ বাহিনী কৃষ্ণসাগরের এই উপদ্বীপটি দখল করার পর সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানেই দেখা গেছে, ক্রিমিয়ানরা সত্যিকার অর্থেই রাশিয়ার অংশ হতে চায়। যদিও সেই গণভোটকে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ স্বীকৃতি দেয়নি।