ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সাথে চলমান যুদ্ধে ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হওয়া ইসরায়েল গাজায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে লক্ষ্য বানিয়ে ভয়াবহ হামলা অব্যাহত রেখেছে। হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এতে বেসামরিক নাগরিকও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
তৃতীয় দিনে গড়ানো এই যুদ্ধে ইসরায়েলি অনেক সেনা ও বেসামরিক নাগরিককে ধরে নিয়ে গেছে হামাসের যোদ্ধারা। অপহৃত ইসরায়েলিদের হামাসের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় আটকে রাখা হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদের কয়েকশ নাগরিক ও সৈন্যকে হামাস জিম্মি করেছে বলে জানিয়েছে। এই জিম্মিদের মুক্তির জন্য মিসরকে মধ্যস্থতার প্রস্তাবও দিয়েছে ইসরায়েল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ভিডিওতে হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তির আকুতি জানাতে দেখা গেছে। সোমবার গাজা উপত্যকাজুড়ে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, হামাসের ঘাঁটি, সামরিক স্থাপনা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও অস্ত্রাগার লক্ষ্য করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলা চলছে।
ইসরায়েলের ভয়াবহ এই হামলায় হামাসের হাতে জিম্মি চার ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে গাজার ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী হামাস। গোষ্ঠীটির সামরিক শাখা আল-কাশেম ব্রিগেড বলেছে, গাজা উপত্যকায় ধরে নিয়ে আসা ইসরায়েলের চার সৈন্য ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।
ওই হামলায় হামাসের কয়েকজন সদস্য হতাহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠী। হামাস কতজন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে রেখেছে তা জানা যায়নি। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, হামাসের হাতে ইসরায়েলি জিম্মির সংখ্যা কয়েক ডজন হতে পারে।
• গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা ইসরায়েলের, খাদ্য-পানি-বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ
ইসরায়েল অধিকৃত গাজা উপত্যকায় ‘সর্বাত্মক’ অবরোধ ঘোষণা করেছে। সোমবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত এই অবরোধের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার এবং জ্বালানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।
দীর্ঘদিন ধরে গাজা উপত্যকার ক্ষমতায় রয়েছে হামাস। এই গোষ্ঠী শনিবার ভোরের দিকে আচমকা রকেট নিক্ষেপ শুরু করে ইসরায়েলে। পরে গাজা উপত্যকায় স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তৃতীয় দিনে পৌঁছানো উভয়পক্ষের চলমান লড়াইয়ে প্রাণহানির সংখ্যা ১ হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বলছে, চলমান সহিংসতায় গাজায় এক লাখ ২৩ হাজারের বেশি বাসিন্দা ইতিমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এর মাঝেই পুরো উপত্যকাকে মরুর দ্বীপে পরিণত করার হুমকি দিয়ে বৃষ্টির মতো বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।
সোমবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, কর্তৃপক্ষ হামাস-অধিকৃত গাজায় ‘সর্বাত্মক অবরোধের’ অংশ হিসেবে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং খাদ্য ও জ্বালানি প্রবেশে বাধা দেবে।
ইসরায়েলি এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী ‘বদমাশ লোকজনের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসাবে সর্বাত্মক অবরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজাকে পুরোপুরি অবরোধ করছি... বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, পানি নেই, গ্যাস নেই— সবই বন্ধ আছে।’