ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা অফিস অব ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটরে (ওসিএইচআর) পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ক্রেইগ মোখিবার। মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
পদত্যাগপত্রে মোখিবার বলেন, ‘ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় এখন যা চলছে তা পরিষ্কারভাবে গণহত্যা, যাকে আমরা বলতে পারি টেক্সবুক কেস অব জেনোসাইড। এ ব্যাপরে সংশয়ে ভোগার কোনো কারণ বা সুযোগ আর কারোর নেই। আমাদের চোখের সামনে প্রতিদিন শত শত ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।’
‘এই গণহত্যার পর কী হবে তাও আমরা অনুমান করতে পারি। সেখানে জাতিগত ফিলিস্তিনীদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদী বসতি স্থাপনকারীদের পুনর্বাসন করার যে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসরায়েল, তা চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে।’
‘যুক্তরাষ্ট্র তার অপ্রতিরোধ্য শক্তি দিয়ে জাতিসংঘকে ঘিরে ধরেছে এবং তার প্রভাবে ইসরায়েলি লবি ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এই ভয়ঙ্কর গণহত্যাকে অকুণ্ঠভাবে সমর্থন করছে। তারা ইসরায়েলকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক, কূটনৈতিক, গোয়েন্দা তথ্য— এক কথায় সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। পশ্চিমা কর্পোরেট সংবাদমাধ্যমগুলেও এমনভাবে সংবাদ প্রকাশ করছে, যাতে এ পুরো প্রক্রিয়া কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়।’
‘দুঃখের বিষয় হলো, সবকিছু চোখের সামনে ঘটা সত্ত্বেও আমাদের প্রতিষ্ঠান এই যুদ্ধ থামাতে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। আমি এই অন্যায় গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, তাকে ১৯৫৩ সালের পর ওই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে জানিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বিশ্লেষকরা। গত ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলার মধ্যে দিয়ে সূত্রপাত ঘটে এই যুদ্ধের।
সেদিন ভোরে গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে কয়েকশ প্রশিক্ষিত হামাস যোদ্ধা এবং নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শত শত বেসামরিক ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে হত্যার পাশাপাশি ২৩৪ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায়। এই জিম্মিদের মধ্যে ১৩৮ জনই বাইরের বিভিন্ন দেশের নাগরিক। গত কয়েক দিনে ৫ জন জিম্মিকে মুক্তিও দিয়েছে হামাস।
এদিকে হামাস হামলা চলানোর পর ওই দিন ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী, যা এখনও চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা বর্ষণে উপত্যকায় নিহত হয়েছেন গাজায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৮ হাজার ৫২৫ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ২১ হাজার ৫৪৩ জন। হতাহত এই ফিলিস্তিনের অধিকাংশই নারী-শিশু ও বেসামরিক লোকজন।