বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও বর্ষসেরা দেশের (কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার) তালিকা প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের সাপ্তাহিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট; আর এবারের তালিকায় শীর্ষ দেশের স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।
বহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট। সেখানে বলা হয়েছে, বর্ষসেরা দেশের তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিত্ত, সুখ কিংবা নৈতিকতার মানদণ্ডকে সেভাবে হিসেবে ধর্তব্যে আনা হয়নি, বরং ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে, অর্থাৎ গত ১২ মাসে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে সেগুলোর ভিত্তিতেই প্রস্তুত করা হয়েছে বর্ষসেরা দেশের এই তালিকা।
ইকোনোমিস্টের ২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশের চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে ৫টি দেশ। এসব দেশের মধ্যে শীর্ষ বা এক নম্বরে আছে বাংলাদেশ, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিরিয়া। এছাড়া তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পোল্যান্ড।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “আমাদের এবারের বিজয়ী বাংলাদেশ, যারা এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, যিনি সাড়ে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ১৫ বছর ধরে শাসন করছিলেন। দেশের স্বাধীনতার নায়কের কন্যা হিসেবে তিনি এক সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি দমন শুরু করেন, নির্বাচনে কারচুপি করেন, বিরোধীদের কারাগারে পাঠান এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার শাসনামলে বিশাল অংকের অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে।”
বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের সময় বরাবরেই প্রতিশোধমূলক সহিংসতা ঘটে থাকে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দল হিসেবে অভিহিত করার পাশাপাশি ইসলামি চরমপন্থাকে হুমকি হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
“তবে এখন পর্যন্ত তাদের পরিবর্তন আশাব্যঞ্জক। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেখানে রয়েছে একটি অস্থায়ী সরকার, যা ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এই সরকার শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।”
তবে বর্তমান বাংলাদেশে বর্তমানে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের সামনের পথ ‘মসৃন নয়’ বলে মন্তব্য করেছে ইকোনমিস্ট। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা যে আসন্ন ২০২৫ সালে এ সরকারের সবচেয়ে বড় দু’টি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে— তাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
“২০২৫ সালে এই সরকারকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে হবে এবং কবে নাগাদ নির্বাচন আয়োজন করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। এর আগে নিশ্চিত করতে হবে যে দেশটির বিচারব্যবস্থা নিরপেক্ষভাবে চলছে এবং বিরোধী দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে। এর কোনোটিই সহজ হবে না।”
'তবে, এসব সত্ত্বেও একজন স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং আরও উদার সরকার গঠনের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য আমাদের এ বছরের সেরা দেশ বাংলাদেশ।'
এই তালিকায় সিরিয়ার ২য় স্থানে উঠে আসার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সাম্প্রতিক ক্ষমতাচ্যুতি। এ ছাড়া, অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য আর্জেন্টিনা, স্বৈরাচারি ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের বিপক্ষে গিয়ে নতুন সরকার গঠনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড দ্য ইকোনমিস্টের চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে।
২০২৩ সালের বিজয়ী ছিল গ্রীস। দেশটি দীর্ঘ আর্থিক সংকট থেকে নিজেদের টেনে তোলায় এবং একটি সংযত মধ্যপন্থী সরকার পুনর্নির্বাচিত করায় সেরা দেশ নির্বাচিত হয়।
এর আগের বছরগুলোর বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছে কলম্বিয়া (গৃহযুদ্ধ অবসানের জন্য), ইউক্রেন (রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিরোধের জন্য) এবং মালাউই (গণতন্ত্রায়নের জন্য)।