আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের রাজধানী দিল্লি পৌরসভার নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে আম আদমি পার্টি (আপ)। সসম্মানে লড়াই উতরে তো গেলেনই, দিল্লিতে আপের মুঠো আরও শক্ত করে ফেললেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লিতে বিজেপির টানা দেড় দশকের পৌর-শাসনকালের সমাপ্তি ঘটল সেই সঙ্গে।
বিধানসভার মতো দিল্লি পৌরসভাতেও শুরু হচ্ছে ঝাড়ু-রাজ। এবার ২৫০ আসনের মধ্যে আপ জিতেছে ১৩৪টি আসন। ২০১৭ সালের তুলনায় ৮৬টি বেশি। ওয়ার্ড সংখ্যার বিচারে গত বারের ভোটে আপের প্রাপ্তি ছিল ৪৮ (২৭০ আসনে ভোট হয়েছিল)।
দেশটির নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বলছে, কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি এ বছর পেয়েছে ৪২ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। ২০১৭ সালের পৌর নির্বাচনে আপ ভোট পেয়েছিল ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।
যদিও শতাংশের বিচারে ভোট বেড়েছে বিজেপিরও। তারা পেয়েছে ৩৯.১২ শতাংশ ভোট, যা ২০১৭ সালে ছিল ৩৬.০৮ শতাংশ। ২০১৭ সালের তুলনায় ভোট বাড়লেও, বিজেপির জেতা ওয়ার্ড ১৮২ থেকে নেমেছে ১০৪ এ। কংগ্রেস পেয়েছে ১১.৬৪ শতাংশ ভোট। গতবারের ভোটে পেয়েছিল ২১.০৯ শতাংশ। কংগ্রেসের ওয়ার্ড ছিল ৩০। এবার তা ৯-এ নেমেছে।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, দিল্লির ভোটে আপের এই লাফ কিন্তু চমকপ্রদ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আপকে খালি হাতে ফিরিয়েছিলেন দিল্লির বাসিন্দারা। কিন্তু ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে তারাই দুর্দান্ত জয় এনে দিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। পৌরসভায় ১৫ বছরের বিজেপি শাসনকে সরিয়ে, এবারও তারা দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করলেন কেজরিওয়ালের বাহিনীকে। ভোট এবং আসন— উভয়ের নিরিখেই এবার বিশাল লাফ দিয়েছে আপ।
আপের এই জয়ের পর উঠে আসছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কোন জাদুতে পৌরসভা দখল সম্পন্ন করল আপ? কী কৌশলে বিজেপির মতো সংগঠিত দলকে পৌরক্ষমতা ছাড়া করলেন কেজরিওয়াল? সর্বোপরি, বিজেপির ‘ডবল ইঞ্জিন’ স্লোগানকে তাদেরই বিরুদ্ধে ব্যবহার করে কতটা ফায়দা তুলতে পারলেন খড়্গপুর আইআইটির এই সাবেক শিক্ষার্থী?
গত ২৪ বছর ধরে দিল্লি বিধানসভায় জয় অধরা রয়ে গেছে বিজেপির। কিন্তু আপ বা কংগ্রেস, রাজ্য সরকার যার হাতেই থাক না কেন, দিল্লি পৌরসভায় বিজেপির দাপট গত দেড় দশক অটুট ছিল। এমনকি ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে দিল্লিবাসী আপকে ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসন দিলেও, দু’বছর পর হওয়া পৌরভোটে বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছিল।
১৯৫৮ সালে তৈরি হয় দিল্লির পৌরসভা। ২০১২ সালে তাকে তিন খণ্ডে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শিলা দীক্ষিত। তৈরি হয় এনডিএমসি (উত্তর দিল্লি পৌরসভা), এসডিএমসি (দক্ষিণ দিল্লি পৌরসভা) এবং ইডিএমসি (পূর্ব দিল্লি পৌরসভা)। ২০২২ সালের ২২ মে তিনটি পৌরসভাকেই ভেঙে দিয়ে গড়া হয় দিল্লি পৌরসভা বা ‘মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অব দিল্লি’ (এমডিসি)। সেই সময় রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওঠাপড়ার সঙ্গে জড়িতদের কেউ কেউ বলেছিলেন, পৌরসভা পুনর্দখলের উদ্দেশেই মোদি এ কাজ করলেন। কিন্তু ভোটের ফল বলছে অন্য কথা। সম্ভবত, যে কথা হিসাবের মধ্যেই আনেননি বিজেপির কৌশলীরা।