ঘূর্ণিঝড় গ্যাবরিয়েলের কারণে নিউ জিল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার এক সপ্তাহ পরও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। ১২ ফেব্রুয়ারি ঘূর্ণিঝড়টি দেশটির নর্থ আইল্যান্ডের সর্বউত্তরাঞ্চলে আঘাত হানার পর পূর্ব উপকূল ধরে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গিয়েছিল, এর তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা জারি করে নিউ জিল্যান্ড সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স গ্যাবরিয়েলকে নিউ জিল্যান্ডের জন্য চলতি শতাব্দীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে অভিহিত করেছেন। রোববার পুলিশ জানিয়েছে, হকস্ বে এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত পরিস্থিতিতে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানী ওয়েলিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী হিপকিন্স বলেছেন, আরও প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ রোববার পর্যন্ত ৬৪৩১ জন মানুষ নিখোঁজ আছেন, আগে নিখোঁজ থাকা আরও ৩২১৬ জন নিরাপদ আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই দুর্যোগে জীবন ‘ওলটপালট’ হয়ে গেছে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেতে ‘খাড়া পর্বতে উঠার’ মতো কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে বলে হিপকিন্স মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে, সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে আর রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিছু এলাকায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে গেছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পণ্য সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে, বহু ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ২৮ হাজার বাড়ি এখনও বিদ্যুৎবিহীন। “প্রত্যেকটি দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসযজ্ঞের প্রকৃত বিস্তৃতি ও ক্ষতি আরও পরিষ্কার হচ্ছে,” বলেছেন তিনি। হিপকিন্স জানান, এ পর্যন্ত ১২টি আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রস্তাব গ্রহণ করেছে নিউ জিল্যান্ড, এদের মধ্যে ফিজির একটি দল পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় অংশ নিতে শিগগিরই আসবে। অস্ট্রেলিয়া থেকে জরুরি পরিষেবার ২৭ জন কর্মী এসেছেন এবং তারা ত্রাণ উদ্যোগে সহায়তা করছেন। দেশটির বৃহত্তম শহর অকল্যান্ড থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে উপকূলীয় এলাকা মুরিওয়াই ও পিহাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো দ্রুত পুনর্নির্মাণ করতে ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা শুরু করেছে অকল্যান্ড থেকে যাওয়া কাউন্সিল। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে যেসব এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে সেখানে দেশটির জরুরি পরিষেবা ও সামরিক বাহিনী হেলিপ্টারের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় সরবারহ নিয়ে গিয়ে ফেলছে। এসব এলাকার খামার, সেতু, গবাদিপশু পানির তোড়ে ভেসে গেছে এবং ঘরবাড়ি তলিয়ে আছে। লুটপাটের খবর আসায় পুলিশ হকস বে ও নিকটবর্তী তাইরাউহিটিতে অতিরিক্ত ১০০ কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন। “আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে,” বলেছেন হিপকিন্স।