জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন ছিলেন রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর একজন শীর্ষস্থানীয় কম্যান্ডার। কিন্তু গত জুন মাসের শেষের দিকে ওয়াগনার ভাড়াটে বাহিনীর ব্যর্থ বিদ্রোহের পর থেকে তিনি ছিলেন লাপাত্তা।
তবে অনলাইনে পোস্ট করা একটি ছবিতে তাকে আবারও প্রকাশ্যে দেখা গেছে। তিনি মস্কোতে তার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রুশ এক সাংবাদিক। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইনে পোস্ট করা এক ছবিতে এমন একজন রাশিয়ান জেনারেলকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে যাকে গত জুনে ওয়াগনার ভাড়াটে গোষ্ঠীর বিদ্রোহের পর থেকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। সের্গেই সুরোভিকিন নামের এই জেনারেল ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা গেছে। প্রিগোজিন গত মাসে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।
বিবিসি বলছে, বেশ কয়েক মাস ধরে জেনারেল সুরোভিকিন ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক আগ্রাসনের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু গত জুন মাসে ভাড়াটে ওয়াগনার গোষ্ঠীর বিদ্রোহের পর থেকে তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তার এই অনুপস্থিতি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা সৃষ্টি হয়েছিল।
এমনকি ভাড়াটে ওয়াগনার গোষ্ঠীর বিদ্রোহের বিষয়ে জেনারেল সুরোভিকিনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলেও খবর বের হয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব পাওয়া সাবেক এই কমান্ডারকে দেখা যাচ্ছে এমন একটি ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিখ্যাত রাশিয়ান মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কেসেনিয়া সোবচাক সোমবার টেলিগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করে সেটির ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন (বন্দি নয়) বাইরে আছেন। তিনি জীবিত, সুস্থ, বাড়িতে, পরিবারের সাথে, মস্কোতে সময় কাটাচ্ছেন। ছবিটি আজ তোলা হয়েছে।’
বিবিসি অবশ্য এখনও এই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সানগ্লাস পরা একজন লোক লাল চুলের এক নারীকে সাথে নিয়ে হাঁটছেন। আর এই নারী দেখতে জেনারেল সুরোভিকিনের স্ত্রী আনার মতো।
আরেক রাশিয়ান সাংবাদিক আলেক্সি ভেনেডিক্টভ টেলিগ্রামে পৃথকভাবে লিখেছেন: ‘জেনারেল সুরোভিকিন তার পরিবারের সাথে বাড়িতে আছেন। তিনি ছুটিতে আছেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাজের জন্য উন্মুক্ত আছেন।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন ওয়াগনার ভাড়াটে সৈন্যরা মস্কোর দিকে যাত্রা করার সময় জেনারেল সুরোভিকিন এক ভিডিও বার্তা নিয়ে সামনে আসেন এবং বিদ্রোহী সেনাদের তাদের ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের সাথেও রুশ এই জেনারেলের সুসম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়।
গত জুনের সেই বিদ্রোহের কয়েক সপ্তাহ পরে রাশিয়ান সামরিক ব্লগাররা অসমর্থিত কিছু প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেছিল, জেনারেল সুরোভিকিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকদিন পরে মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনও আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের অক্টোবরে সুরোভিকিনকে ইউক্রেনে রাশিয়ার কথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে তিন মাস পরই আবার তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি রাশিয়ার অ্যারোস্পেস ফোর্সের কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন।
ওয়াগনার বিদ্রোহের পর গত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দারা দাবি করেন, ওয়াগনারের বিদ্রোহের পর সুরোভিকিনকে মূলত সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে ক্ষমতাহীন করে রাখা হয়েছে।
এছাড়া সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে জানায়, ওয়াগনারের বিদ্রোহের ব্যাপারে সুরোভিকিন আগে থেকে জানতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এ ব্যাপারে কাউকে অবহিত করেননি।