পশ্চিমা দেশগুলোর তিরস্কার সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে গভীর বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় চীন। আর এ লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত সংযোগ বৃদ্ধি এবং গভীর পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং।
এছাড়া গত বছর রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেন আক্রমণ করার পর পশ্চিমের অসম্মতি সত্ত্বেও উভয় দেশ আরও ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী বর্তমানে চীন সফর করছেন এবং মঙ্গলবার তিনি বেইজিংয়ে চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে ‘গভীরভাবে’ আলোচনা করেছেন।
রাশিয়ার এই মন্ত্রীর সফরটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মস্কো সফর করছেন এবং সেখানে রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কৌশলগত আলোচনার পাশাপাশি আগামী মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বেইজিং সফরের মঞ্চও প্রস্তুত করছেন তিনি।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রুশ মন্ত্রীর সঙ্গে মঙ্গলবারের আলোচনায় চীন-রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা দুই রাষ্ট্রপ্রধানের ‘কৌশলগত দিকনির্দেশনার’ অধীনে গভীরতর এবং আরও ‘দৃঢ়’ হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও।
রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা রাশিয়া তার অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য ঘনিষ্ঠ মিত্র বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকেছে এবং একইসঙ্গে তেল ও গ্যাসের পাশাপাশি শস্যের চীনা চাহিদাও পূরণ করছে মস্কো।
চলতি বছরের আগস্টে রাশিয়ান পণ্যের চীনা আমদানি এক বছরের আগের তুলনায় ৩ শতাংশ বেড়ে ১১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে বলে সর্বশেষ চীনা কাস্টমস ডেটায় দেখা গেছে।
অবশ্য ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের আলোকে মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। বেইজিং জোর দিয়ে বলেছে, রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক আন্তর্জাতিক নিয়মনীতিকে লঙ্ঘন করে না এবং চীন তার ইচ্ছামতো দেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরির অধিকার রাখে।
চীনের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ান দূরপ্রাচ্যের সীমান্ত রয়েছে এবং ওই অঞ্চলটি আন্তঃসীমান্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে নতুন কৌশলগত গুরুত্ব পেয়েছে।
গত সপ্তাহে রাশিয়ার ইউনাইটেড অয়েল এবং গ্যাস-কেমিক্যাল কোং এবং চীনের জুয়ান ইউয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট রাশিয়ান নিঝনেলেনিনস্কোয়ে শহরকে চীনের টংজিয়াংয়ের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য সেখানকার একটি রেল সেতুর কাছে ট্রান্সশিপমেন্ট তেল কমপ্লেক্স তৈরি করতে সম্মত হয়েছে।
এছাড়া রাশিয়ান দূরপ্রাচ্য থেকে চীনে সামুদ্রিক পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর আশাও করছে মস্কোর কর্তৃপক্ষ। মূলত ওই অঞ্চলে রাশিয়ার প্রায় ৭০ শতাংশ সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়ে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ফুকুশিমা প্ল্যান্ট থেকে তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে ছাড়ার কারণে বেইজিং জাপান থেকে সামুদ্রিক খাবার আমদানি নিষিদ্ধ করার পর এই সুযোগ নিতে চাইছে রাশিয়া।