ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি দুই শিক্ষার্থীর অপহরণ ও নিহতের জেরে ফের সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় রাজধানী ইম্ফলসহ কয়েকটি জেলায় কারফিউ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
বৃহস্পতিবার মণিপুর রাজ্য পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এল. কাইলুন বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘রাজধানী ইম্ফলসহ কয়েকটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে।’
এছাড়া সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে গত ৫ দিন ধরে রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জনজাতি অধ্যুষিত রাজ্য মণিপুরে গত মে মাস থেকে সংঘাত শুরু হয়েছে মেইতি, কুকি ও চিন জাতিগোষ্ঠীর মতো। মেইতিরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী, অন্যদিকে কুকি-চিন জাতিগোষ্ঠীর লোকজন খ্রিস্টান।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ইম্ফলে দুই কলেজ শিক্ষার্থী অপহৃত হন, পরে শনিবার তাদের লাশ উদ্ধারের পর বিক্ষোভ শুরু করেন রাজ্যের মেইতি জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। নিহত দুই শিক্ষার্থী মেইতি জনগোষ্ঠীর ছিলেন।
অল্প সময়ের মধ্যেই এই বিক্ষোভ দাঙ্গায় রূপ নেয় এবং রাজধানীসহ গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ শুরুর দিনই রাজ্যজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে সরকার।
তবে তাতে দাঙ্গা থামানো যায়নি। বুধবার তা রীতিমতো আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং রাজ্যজুড়ে দুই জনগোষ্ঠীর ৮০ জনেরও বেশি আহত হন।
তারপর বৃহস্পতিবার এই কারফিউ ঘোষণা করা হলো।
রাজধানী ইম্ফলসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুই জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা সংঘাতে
গত ৫ দিনের দাঙ্গায় রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেটির একটি দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং দু’টি পুলিশ স্টেশনে পেট্রোলবোমা হামলাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত গত ৩ মে ইম্ফল হাইকোর্ট মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতিদের সাংবিধানিকভাবে তফসিলি জাতি মর্যাদা দিতে কেন্দ্রীয় সরকার বরাবর সুপারিশ করেছিলেন। মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ মেইতি জনগোষ্ঠীর।
হাইকোর্টের এই সুপারিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন রাজ্যের অপর জনগোষ্ঠী কুকি। মণিপুরে মোট জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ এই জাতিগোষ্ঠীর।
অল্পসময়ের মধ্যেই বিক্ষোভ জাতিগত দাঙ্গায় রূপ নেয়। গত চার মাসের দাঙ্গায় সেই রাজ্যে দুই জনগোষ্ঠীর অন্তত ১৮০ নিহত হয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ।