টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। অন্যদিকে গাজায় এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের সীমান্তে ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াই করছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
ইরান সমর্থিত এই গোষ্ঠীটি প্রতিদিনই ইসরায়েলে হামলা করছে। এই পরিস্থিতিতে লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে ব্যাপক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা থাকলেও লেবাননের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ‘যুদ্ধ’ এড়াতে কাজ করছেন তিনি।
এমনকি বিশৃঙ্খলা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে গ্রাস করতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েল নিজেদের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত গুলি বিনিময় করলেও লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী সোমবার বলেছেন, তার দেশ যেন হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে প্রবেশ না করে তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছেন তিনি।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, তিনি সংঘাত বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। মূলত অব্যাহত সীমান্ত সংঘর্ষের ফলে হামাসের শক্তিশালী মিত্র হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে নতুন ফ্রন্ট খুলতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।
বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিকাতি বলেছেন, ‘লেবাননকে যুদ্ধে টেনে নেওয়ার প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি’। লেবানন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছে।
এএফপি বলছে, নগদ অর্থের সংকটে থাকা লেবানন মূলত নেতৃত্বহীন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার মুখোমুখি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে গত এক বছর ধরে কোনও নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নেই। আবার মিকাতিও প্রায় দেড় বছর ধরে তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে মিকাতির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলছেন, যুদ্ধ সামনে আসছে কিনা সে সম্পর্কে তার কাছে কোনও ‘স্পষ্ট উত্তর’ নেই। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ‘আঞ্চলিক নানা ঘটনাবলীর ওপর নির্ভর করবে’ বলেও জানান তিনি।
২০০৬ সালে ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই সংঘর্ষে লেবাননে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। নিহত এসব মানুষের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিল ১৬০ জন, যাদের বেশিরভাগই ছিল সৈন্য।
সোমবার মিকাতি বলেন, ‘আপাতত হিজবুল্লাহ যুক্তিসঙ্গত উপায়ে এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিস্থিতি পরিচালনা করছে এবং পরিস্থিতি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে (যুদ্ধ না হওয়ার বিষয়ে) আমি লেবানিজদের আশ্বস্ত করতে পারছি না, কারণ পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে।’
মিকাতি বলছেন, চলমান উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে তা লেবাননের বাইরেও প্রসারিত হতে পারে। তার ভাষায়, ‘আমি আশঙ্কা করছি যে... বিশৃঙ্খলা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে গ্রাস করতে পারে।’
এএফপি বলছে, হিজবুল্লাহর হাতে লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়েও বেশি শক্তিশালী অস্ত্রাগার রয়েছে। তাদের হাতে এমন ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে যা ইসরায়েলের অনেক গভীরে আঘাত হানতে পারে। তবে এই গোষ্ঠীটি এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলের উত্তর সীমান্ত অঞ্চলেই নিজেদের হামলা সীমাবদ্ধ রেখেছে।
এছাড়া দিন দু’য়েক আগে হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত হয়েছে। সারফেস টু এয়ার অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের ওই ড্রোন ভূপাতিত করে হিজবুল্লাহ।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। যদিও ইসরায়েলও পাল্টা আঘাত করছে।
রয়টার্স বলছে, তিন সপ্তাহ আগে গাজা সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং লেবাননের ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী প্রতিদিনই গুলি বিনিময় করছে। সীমান্তে এখনও পর্যন্ত ৪৬ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত এবং আরও ৪৩ জন আহত হয়েছেন বলে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি জানিয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, হিজবুল্লাহর হামলায় এখন পর্যন্ত তাদের অন্তত সাত সেনা নিহত হয়েছে।