তুরস্কে প্রাণঘাতী ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার তিন সপ্তাহ পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে একটি কুকুরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের একটি ধসে যাওয়া ভবনের নিচ থেকে বুধবার কুকুরটি জীবিত উদ্ধার হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।
দেশটির মধ্যাঞ্চলের স্থানীয় এক পৌরসভার উদ্ধারকারী দল বুধবার আলেক্স নামের কুকুরটিকে উদ্ধার করেছে। পরে কুকুরটিকে আন্তাকিয়া শহরের প্রাণী সুরক্ষা সংস্থা হায়তাপের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তুরস্কের স্থানীয় বার্তা সংস্থা ডিএইচএর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, উদ্ধারকারীরা দু’টি বড় কংক্রিটের স্ল্যাবের মাঝে পৌঁছে আটকা পড়া কুকুরটিকে ডাকছেন।
একজন উদ্ধারকারীকে বলতে শোনা যায়, সে কি আসছে? ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষের মাঝে একটি ছোট গর্তে দুর্বল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় আলেক্সকে। কুকুরটিকে উদ্দেশ্য করে একজন উদ্ধারকারী বলেন, প্রিয় আলেক্স, আসো। বেশ করেছো, আমার বেটা।
পরে ছবিতে দেখা যায়, উদ্ধারকারীরা কুকুরটি আলিঙ্গন করছেন। এ সময় তাকে বেশ সতর্ক এবং সুস্থ বলে মনে হয়। উদ্ধারকারীরা কুকুরটিকে পানি দেন।
অলৌকিক এই উদ্ধারের ঘটনার পর দেশটির বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ডিএইচএ-কে স্থানীয় এক ব্যক্তির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক জীবিত প্রাণী আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তা মানুষ অথবা প্রাণী হোক না কেন।’
তুরস্কে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর একটি আন্তাকিয়া। ভূমিকম্পের পর এই শহরের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া শত শত বিড়াল, কুকুর, খরগোশ এবং পাখিকে বাঁচিয়েছেন উদ্ধারকারীরা।
অশ্রুসিক্ত মালিক কিংবা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ফোন কল পাওয়ার পর প্রাণী সুরক্ষা সংস্থা হায়তাপ আন্তাকিয়ার ধ্বংসস্তূপ থেকে কুকুর, খরগোশ, গরু এমনকি পাখিও উদ্ধার করেছে।
সংস্থাটির তাঁবুতে পশু চিকিৎসকরা অনবরত আহত প্রাণীর সেবা ও চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছেন। তুরস্কের অটোমান-পরবর্তী ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে শোকে স্তব্ধ হয়েছে পুরো বিশ্ব। সেখানে পশু উদ্ধারের এমন গল্পগুলো মানুষের মাঝে এক ধরনের সান্ত্বনা হিসাবে কাজ করছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারির শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পে তুরস্কে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার এবং সিরিয়ায় ৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। উভয় দেশে ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়েছে আরও লাখ লাখ বাড়িঘর।