ভারতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ চালানোর আহ্বান জানিয়েছে দেশটির একটি সংগঠন। ভারতীয় এই সংগঠনের নাম ‘অখিল ভারতীয় বনবাসী কল্যাণ আশ্রম (এবিভিকেএ)’।
এই সংগঠনটি ভারতের কট্টর উগ্রপন্থি সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) উপজাতীয় শাখা। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) উপজাতীয় শাখা অখিল ভারতীয় বনবাসী কল্যাণ আশ্রম (এবিভিকেএ) দেশটির ঝাড়খণ্ডের উপজাতীয় সম্প্রদায়গুলোকে কথিত বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ চালানোর আহ্বান জানিয়েছে।
তাদের অভিযোগ, কথিত ‘লাভ জিহাদে’ মাধ্যমে মেয়েদের ফাঁদে ফেলছে বাংলাদেশি অভিবাসীরা।
রোববার হরিয়ানা রাজ্যের সামালখা শহরে অনুষ্ঠিত এবিভিকেএ’র তিন দিনের দীর্ঘ বৈঠকের সমাপ্তিতে কট্টরপন্থি এই সংগঠনটি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে দ্রুত ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছে।
দ্য হিন্দু বলছে, ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলে কর্মরত এবিভিকেএ’র কর্মকর্তা রাজকিশোর হাঁসদা ভারত ও নেপাল থেকে এই অনুষ্ঠানে যোগদানকারী ২ হাজারেরও বেশি লোকের সামনে “লাভ জিহাদ” এবং “ল্যান্ড জিহাদ” এর ক্রমবর্ধমান ঘটনা সম্পর্কে কথা বলেন। মূলত অন্য ধর্মের ব্যক্তির কাছে জমি বিক্রির বিষয়টি ভারতের কট্টরপন্থি ও উগ্রবাদী সংগঠনগুলো “ল্যান্ড জিহাদ” নামে অভিহিত করে থাকে।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মুসলমানরা, যারা এই অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করেছে, তারা সাঁওতাল উপজাতির মেয়েদের বিয়ে করছে এবং পরে তাদের জমিও দাবি করছে। আমাদের সকলকে এর বিরুদ্ধে মহাভারত (যুদ্ধ) চালাতে হবে এবং আমাদের বোন ও কন্যা, বন এবং জমির পাশাপাশি আমাদের ধর্ম রক্ষা করতে হবে।”
নাগাল্যান্ডের থুম্বাই জেলিয়াং তার রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্মে রূপান্তরিত আদিবাসীদের “সমস্যা” সম্পর্কে এবং কীভাবে এবিভিকেএ তাদের মূল বিশ্বাসে ফিরে যেতে “সহায়তা” করছে সে বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, “ধর্মান্তরিত লোকজন স্থানীয় লোকজনকে বহিরাগত প্রমাণ করার চেষ্টা করছে।”
ছত্তিশগড় থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া রামনাথ কাশ্যপ রাজ্যটির বস্তার অঞ্চলে মাওবাদের প্রভাব সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি বলেন, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকারের সাথে আপস করা হচ্ছে।
অখিল ভারতীয় বনবাসী কল্যাণ আশ্রম (এবিভিকেএ)-এর জাতীয় সভাপতি সত্যেন্দ্র সিং এই অনুষ্ঠানে ভারতজুড়ে উপজাতীয় সম্প্রদায়কে বিভাজনকারী শক্তি থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। এছাড়া যারা তাদের ‘হিন্দু’ সমাজ গঠনে বিচ্ছিন্নতার জন্য ‘উস্কানি’ দেওয়ার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধেও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি দাবি করেন, “আমাদের সবার শিকড় বনে আছে। আদিবাসীরা ‘সনাতনী’ সমাজের স্তম্ভ, যা প্রাচীন বেদ তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।”
সত্যেন্দ্র সিং আরও দাবি করেছেন, হিন্দুদের থেকে আদিবাসীদের আলাদা করার ষড়যন্ত্র ব্রিটিশরাও করেছিল। তারা এই কাজ করার জন্য ইতিহাস এবং বইও বিকৃত করেছিল।
দ্য হিন্দু বলছে, সভায় কট্টরপন্থি সংগঠন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি এবিভিকেএ-এর সমস্ত স্বেচ্ছাসেবকদের নিজ নিজ অঞ্চলে উপজাতীয় উন্নয়নের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।