ভারতের কেরালা রাজ্যের কোঝিকোড জেলায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত দুজনের প্রাণহানি ঘটেছে। মঙ্গলবার দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানসুখ মান্দাভিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, সোমবার কেরালার বেসরকারি একটি হাসপাতালে দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর আসে। পরে কোঝিকোড জেলায় স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়। এই সতর্কতা জারির কয়েক ঘণ্টা পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিপাহ ভাইরাসে ওই দুই জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানসুখ মান্দাভিয়া বলেছেন, কেরালার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এবং রাজ্য সরকারকে নিপাহ ভাইরাস ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করতে কেন্দ্রীয় একটি দলকে সেখানে পাঠানো হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা পিটিআই বলছে, কেরালায় নিপাহ ভাইরাসে প্রথম মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে গত ৩০ আগস্ট। আর দ্বিতীয় রোগী মারা গেছেন সোমবার।
প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাস মোকাবিলায় কেরালা সরকার কোঝিকোডে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। একই সঙ্গে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে জেলার বাসিন্দাদের মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন রাজ্যের বাসিন্দাদের এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। কারণ যারা আক্রান্তদের সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে ছিলেন তারা চিকিৎসাধীন আছেন।
এর আগে, ২০১৮ সালে কেরালার কোঝিকোড ও মালাপ্পুরম জেলায় নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে ২০২১ সালে কোঝিকোডে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগী শনাক্ত হন।
২০২১ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা অ্যাকসেস টু মেডিসিন্স ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জয়শ্রী কে লিয়ার চীনে শনাক্ত হওয়া নিপাহ ভাইরাস বিশ্বজুড়ে নতুন মহামারি ডেকে আনতে পারে বলে মন্তব্য করেন। ওই সময় তিনি বলেন, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৭৫ শতাংশের বেশি। এটিই পরবর্তী বড় মহামারি রূপে হাজির হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের তীব্র শ্বাসকষ্ট, এনসেফালাইটিস, জ্বর, মাথা ধরা, পেশির যন্ত্রণা, বমি ভাব হতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ হয়।
বাদুড় নিপাহ ভাইরাসের প্রাকৃতিক বাহক। এর আগে বাংলাদেশেও খেজুরের রস পানে বাদুড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বৈশ্বিকভাবে অন্তত ১৬টি প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধির তালিকা করেছে; সেই তালিকার প্রথম দিকের একটি নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ।
ডব্লিউএইচও এই ভাইরাসটিকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য বৃহত্তর হুমকি শনাক্ত করলেও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর এটি মোকাবিলায় কোনও প্রকল্পই নেই, বলছে অ্যাকসেস টু মেডিসিন্স ফাউন্ডেশন।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে সার্স, মার্স ভাইরাসের মতো শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসগুলোকেও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়। এসব ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলেও।