আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের আঘাতে নিহতদের সংখ্যা বেড়ে ৬৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। মরক্কোর রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল আল আওলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ভূমিকম্পে ২৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে হতাহতের নতুন কোনো সংখ্যা ঘোষণা করেনি মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) মরক্কোর স্থানীয় সময় রাত ১১টার একটু পর আটলাস পর্বতমালার কাছে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার প্রথম ৯ ঘণ্টাতেই ৬৩২ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ রাত পেরিয়ে দেশটিতে মাত্র সকাল হয়েছে। আর এখনই শুরু হবে আসল উদ্ধার অভিযান।
রাতের বেলা রাজধানী রাবাতসহ উপকূলীয় শহর কাসাব্লানকা এবং এসোরিয়াতেও শক্তিশালী কম্পন অনুভব করেন সাধারণ মানুষ।
ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী মারাখেস শহর। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে সেখানকার অসংখ্য বাড়ি-ঘর ধসে পড়েছে। আর সেগুলোর নিচে চাপা পড়ে বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভূমিকম্পের পরপরই মারাখেসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মারাখেসের স্থানীয় বাসিন্দা হুদা ওতাসেফ বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের সময় তিনি রাস্তায় হাঁটছিলেন। তিনি এবং তার পরিবারের কাছের সদস্যরা ঠিক আছেন। কিন্তু তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে অন্তত ১০ জন ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘এটি পুরোপুরি বিষ্ময়কর একটি পরিস্থিতি ছিল। আমরা ভালো এবং সুস্থ আছি, কিন্তু আমি এখনো আতঙ্কে আছি। আমার পরিবারের অন্তত ১০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। আমি এটি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, দুই দিন আগে তারা ছিল, আজ তারা বেঁচে নেই।’
মারাখেসের অপর এক বাসিন্দা ফয়সাল বাদুর জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের সময় তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন। কিন্তু চলন্ত অবস্থাতেই বুঝতে পারেন কি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে তার দেশ।
তিনি বলেছেন, ‘আমি গাড়ি থামিয়ে বুঝতে পারি কি ভয়াবহ বিপর্যয় এটি ছিল। চিৎকার-চেঁচামেচি ও কান্নার শব্দ… অসহনীয় ছিল।’
বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর যেসব মানুষ বাইরে বের হয়েছিলেন তারা কেউ আর রাতে বাড়িতে অবস্থান করেননি। এর বদলে বাড়ি থেকে শীতের কাপড় নিয়ে চলে আসেন এবং আরও ভূমিকম্পের ভয়ে সারারাত রাস্তাতেই কাটান।
এদিকে মরক্কোতে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি গত ১২৪ বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।