পবিত্র রমজান মাসে গান সম্প্রচার করায় আফগানিস্তানের একটি রেডিও স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন তালিবান গোষ্ঠী। আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ওই রেডিও স্টেশনটি যারা পরিচালনা করতেন, তাদের বেশিরভাগই নারী।
বার্তাসংস্থা এপি’র বরাত দিয়ে শনিবার (১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাসে গান বাজানোর জন্য আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বে নারী কর্মীদের পরিচালিত একটি রেডিও স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে শনিবার একজন তালেবান কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এপি বলছে, বন্ধ করে দেওয়া ওই রেডিও স্টেশনের নাম সাদাই বানোওয়ান। যার অর্থ নারীর কণ্ঠ। এটি আফগানিস্তানের একমাত্র নারী-চালিত রেডিও স্টেশন। ১০ বছর আগে কার্যক্রম শুরু করা এই রেডিও স্টেশনের আটজন কর্মী রয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জন নারী।
আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পরিচালক মোয়েজুদ্দিন আহমাদি বলেছেন, রেডিও স্টেশনটি রমজান মাসে গান ও সঙ্গীত সম্প্রচার করে ‘ইসলামিক আমিরাতের আইন ও বিধি’ বেশ কয়েকবার লঙ্ঘন করেছে এবং এই কারণে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতাসীন তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানকে ‘ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তান’ নামে উল্লেখ করে থাকে। যদিও তালেবানের এই পদক্ষেপ এখনও বিশ্বের কোথাও স্বীকৃতি পায়নি।
আহমাদি বলেছেন, ‘যদি এই রেডিও স্টেশনটি ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তানের নীতি মেনে নেয় এবং আবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করবে না বলে গ্যারান্টি দেয়, তাহলে আমরা এই রেডিও স্টেশনকে আবার চালু করার অনুমতি দেবো।’
অবশ্য কোনও ধরনের নীতি লঙ্ঘনের কথা অস্বীকার করেছেন রেডিও স্টেশনটির প্রধান নাজিয়া সরোশ। এটি একটি ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করে তিনি বলেছেন, স্টেশনটি বন্ধের কোনও প্রয়োজন ছিল না।
তিনি বলেন, তালেবানরা ‘আমাদের বলেছে- আপনি সঙ্গীত সম্প্রচার করেছেন। তবে আমরা কোনও ধরনের সঙ্গীত সম্প্রচার করিনি।’
এপি বলছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং ভাইস অ্যান্ড ভার্চু অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা রেডিও স্টেশনে এসে এটি বন্ধ করে দেন। নাজিয়া সরোশ বলছেন, স্টেশন কর্মীরা ভাইস এবং ভার্চু দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেছেন তবে সেখানকার কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের কাছে স্টেশনটি বন্ধের বিষয়ে আর কোনও অতিরিক্ত তথ্য নেই।
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর দেশটিতে অনেক সাংবাদিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন। আফগান ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’র মতে, তহবিলের অভাবে বা কর্মীরা দেশ ছেড়ে যাওয়ার কারণে মিডিয়া আউটলেটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়সহ ষষ্ঠ শ্রেণির বাইরের অধিকাংশ শিক্ষা ও চাকরি করার ওপর নারীদের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তালেবান। এছাড়া দেশটিতে গানের ওপর কোনও সরকারি নিষেধাজ্ঞাও নেই।
যদিও ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে নিজেদের পূর্ববর্তী শাসনের সময় তালেবান গোষ্ঠী দেশের বেশিরভাগ টেলিভিশন, রেডিও এবং সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করেছিল।