
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান বিমান হামলায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা। ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না হাসপাতাল, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বেসামরিক নাগরিকদের বাসা-বাড়িও। গত ২৯ দিনের যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ৯ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৯০০ জনের বেশি শিশু।
এর মাঝেই শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গাজার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে। এতে দেখা যায়, গাজা উপত্যকার দক্ষিণের দিকে চলে যাওয়া একটি রাস্তায় একের পর এক লাশ পড়ে আছে। রয়টার্স বলছে, অন্তত সাতজনের মরদেহ ওই সড়কে পড়ে আছে।
গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে বর্তমানে স্থল হামলা পরিচালনা করছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। স্থল হামলার পাশাপাশি বিমান ও সমুদ্র থেকেও গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় প্রতিদিন শত শত ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটছে।
গাজা শহর থেকে দক্ষিণের ওয়াদির মধ্যবর্তী আল-রশিদ উপকূলীয় সড়কে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে বলে রয়টার্স নিশ্চিত হয়েছে। রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিওটি ধারণের তারিখ যাচাই করতে পারেনি। তবে ভিডিওটি যে শুক্রবারের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি সেটি নিশ্চিত হয়েছে রয়টার্স।
একই সাথে ভিডিওটি ধারণ করা ব্যক্তির পরিচয় কিংবা ভিডিওতে যাদের মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে তাদের পরিচয়ও যাচাই করতে পারেনি ব্রিটিশ এই বার্তা সংস্থা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এই ভিডিওর বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ভিডিওতে কিছু ধ্বংসাবশেষ এবং অনেকের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র মরদেহের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে। নিহতদের অন্তত একজন শিশু। রাস্তায় রক্তের দাগও রয়েছে। রয়টার্স বলছে, কোনও ব্যক্তি বা কিশোর ভিডিওটি রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় ধারণ করেছে। ভিডিও ধারণের সময় তাকে কথা বলতে ও কান্না করতেও শোনা যায়। একপর্যায়ে তার পেছনে সাইকেলে থাকা আরেক ব্যক্তিকে দেখা যায়।
সাইকেল আরোহীকে আরবিতে বলতে শোনা যায়, ‘‘আল্লাহ, একটি শিশুর মরদেহ। আল্লাহ, নারী ও তরুণীর মরদেহ। আল্লাহ আমাদের লোকজনদের রক্ষা করুন। দয়া করুন।’’
ইসরায়েল বলছে, গাজার উত্তর উপত্যকাকে দক্ষিণ উপত্যকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তাদের সামরিক বাহিনী। বর্তমানে গাজা নগরীকে পুরোপুরি ঘিরে অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। গাজা ওয়াদির কাছের সড়ক কেটে মূল শহরকে দক্ষিণ গাজা থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা শুরু করা গাজার ক্ষমতাসীন সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে উপত্যকাজুড়ে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের হামলায় উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন এক হাজার ৫০০ জনের বেশি।
ইসরায়েলে হামলা চালানোর দিন (৭ অক্টোবর) ২৪২ জনের বেশি ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে জিম্মি করেছে হামাস। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় এই জিম্মিদের অন্তত ৫০ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে গোষ্ঠীটি।
রয়টার্স বলছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর আল্টিমেটামের পর গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণের দিকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন অনেকে। বেসামরিক নাগরিকদের উত্তরাঞ্চল থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও পথে ইসরায়েলি বাহিনী বোমাবর্ষণ করছে।