আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশির বিভিন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করছে ভারত। সোমবার ভারতীয় বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন সৌরবিদ্যুৎ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক জোট ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সের (ইসা) মহাপরিচালক অজয় মাথুর।
প্রসঙ্গত, এক হাজার মেগাওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎকে এক গিগাওয়াট বলে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশের দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট থাকলেও দেশে প্রতিদিন উৎপাদিত বিদ্যুতের গড় পরিমাণ ৯ হাজার মেগওয়াট বা ৯ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ।
ইসার মহাপরিচালক অবশ্য জানিয়েছেন, ভারতে এই মুহূর্তে সৌর বিদ্যুতের পরিমাণ বাড়ালেও তা তেমন উপকারে আসবে না, কারণ বাড়তি বিদ্যুৎ সংরক্ষণের জন্য যে শক্তিশালী ব্যাটারি প্রয়োজন— তা ভারতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ব্যাটারির সক্ষমতা এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
পিটিআইকে অজয় মাথুর বলেন, ‘কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেই চলে না, শক্তিশালী ব্যাটারির মাধ্যমে তা সংরক্ষণও করতে হয়। বর্তমানে ভারতে সৌর ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে, তা যদি সংরক্ষণ করা যেত— তাহলে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ ঘাটতি কমত, অন্যদিকে গ্রাহক পর্যায়ে এর দামও কমে আসত।’
‘ব্যাটারি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো যে তৎপরতা, তার নিরিখে আশা করা যায় যে আগামী ২০২৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাজারে নতুন প্রজন্মের ব্যাটারি আসবে। কোম্পানিগুলোর যদি নিজেদের মধ্যকার অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে ব্যাটারির দামও কমবে।’
‘বিভিন্ন দিক সার্বিক ভাবে বিবেচনা করে আমরা আশা করছি, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন ৫০০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে এবং তার সবটুকু সংরক্ষণ ও ব্যবহারও করা সম্ভব হবে। ফলে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাবে।
বর্তমান বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ইসার মহাপরিচালক বলেন, ‘সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় নিয়মিত রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহ-ঝড়-বৃষ্টি-বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকার কারণে এসব দুর্যোগ শুরু হয়েছে। গত প্রায় ২০০ বছর ধরে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্রমবর্ধমান এই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য মূলত দায়ী।’
‘বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি তাদের এই আশঙ্কা সত্যি হয়, সেক্ষেত্রে পৃথিবীর প্রাণ-প্রকৃতিতে রীতিমতো বিপর্যয় শুরু হবে।’
‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো— এটি পরিবেশবান্ধব। তাই বিশ্বকে বাঁচাতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ নেই।’