অঘোষিত সফরে কানাডায় গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সফরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে দেখা করার পাশাপাশি কানাডিয়ান পার্লামেন্টে ভাষণও দেবেন ইউক্রেনীয় এই প্রেসিডেন্ট।
রুশ আগ্রাসন শুরুর পর উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে এটিই জেলেনস্কির প্রথম সফর। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশের পক্ষে সমর্থন জোগাড়ে অঘোষিত সফরে কানাডায় পৌঁছেছেন। কানাডিয়ান টিভি রাজধানী অটোয়াতে বিমানবন্দরের রানওয়েতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাথে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে দেখা করার ফুটেজ প্রকাশ করেছে।
বিবিসি বলছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর কানাডায় জেলেনস্কির এটিই প্রথম সফর। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে জেলেনস্কি ওয়াশিংটন থেকে অটোয়াতে পৌঁছান। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অন্যান্য রাজনীতিবিদদের সাথে বৈঠক করেন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ছাড়াও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনে ছিলেন আরও একটি কারণে। আর সেটি হচ্ছে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার দেশকে সাহায্য করার জন্য আরও তহবিল নিশ্চিত করা।
এছাড়া চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তবে ইউক্রেনীয় শস্য আমদানি নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে ঘিরে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া এবং হাঙ্গেরির সমালোচনা করার পরে প্রতিবেশী এই দেশগুলোর সঙ্গে কিয়েভের কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কানাডা যতদিন লাগবে ততদিন ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখবে এবং আমরা আইনের শাসন ও শৃঙ্খলাভিত্তিক আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সবসময় দৃঢ় অবস্থানে থাকব।’
পৃথক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলেছে, কানাডা সফরের সময় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অটোয়াতে কানাডিয়ান পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন এবং তারপরে ট্রুডোর সাথে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এর আগে ২০২২ সালের মার্চ মাসে কানাডিয়ান আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে ভার্চ্যুয়ালি ভাষণ দিয়েছিলেন জেলেনস্কি।
অবশ্য ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য সমর্থনও কিছু দেশে বিতর্কিত হয়ে উঠছে। এছাড়া অনেক দেশ সহায়তা দেওয়া ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে। এমনকি ইউক্রেনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অনুরোধ সত্ত্বেও যুদ্ধে অর্থায়নের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকানদের আচরণে সংশয় বাড়ছে।
গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশ নিয়ে ভাষণ দেওয়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘রাশিয়া বিশ্বাস করে, বিশ্ব ক্লান্ত হয়ে উঠবে এবং কোনও ধরনের ফলাফল ছাড়াই ইউক্রেনে নৃশংসতা চালানোর সুযোগ দেবে। যদি আমরা ইউক্রেনকে ধ্বংস করতে দেই, তাহলে কি কোনও দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে?’
মার্কিন কংগ্রেস এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের জন্য ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের সহায়তা অনুমোদন করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপে যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে আমেরিকানদের মধ্যে ইউক্রেনে আরও অর্থ ব্যয়ের পক্ষে সমর্থন বেশ হ্রাস পেয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে।
এছাড়া কিয়েভের কট্টর মিত্র বলে পরিচিত পোল্যান্ড গত বুধবার ঘোষণা করেছে, তারা আর ইউক্রেনে নতুন করে কোনও অস্ত্র পাঠাবে না এবং এর পরিবর্তে আরও আধুনিক অস্ত্র দিয়ে নিজেদের আত্মরক্ষার দিকে মনোনিবেশ করবে তারা।