গত ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে একটি সংগীত উৎসবে হামলা চালিয়ে দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করে। একই সঙ্গে আরও ২০০ জনের বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রাখে। ওই দিন শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ তিন সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর এখনও চলছে। প্রতিনিয়ত হামলা-পাল্টা হামলায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটছে।
জিম্মি করা ইসরায়েলি ও বিদেশিদের একটি ভিডিও কয়েক দিন আগে প্রকাশ করেছিল গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। ভিডিওতে জার্মানি ও ইসরায়েলের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ২৩ বছর বয়সী শানি লৌককেও দেখা যায়। ভিডিও দেখে শানির মা তাকে শনাক্ত করেছিলেন। সোমবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের বন্দুকধারীদের হাতে অপহরণের শিকার হওয়া জার্মান-ইসরায়েলি তরুণী শানি লৌকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা এই খবরে ভেঙে পড়ছি যে, ২৩ বছর বয়সী জার্মান-ইসরায়েলি নাগরিক শানির মরদেহ পাওয়া গেছে এবং তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নোভা সংগীত উৎসবে আকস্মিক হামলা চালায় হামাসের যোদ্ধারা। এই সংগীত উৎসবে হামলা চালিয়ে হামাস ২৬০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করে।
হামাসের সামরিক শাখা আল-কাশেম ব্রিগেডস বলছে, তাদের হাতে জিম্মিদের অন্তত ৫০ জন ইসরায়েলি বিমান হামলায় মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় আল-কাশেম ব্রিগেডস জিম্মিদের প্রাণহানির এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি ও বিদেশিদের অন্তত ৫০ জন ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইসরায়েলে ঢুকে হামলা ও গাজা থেকে রকেট নিক্ষেপ শুরু করে হামাস। হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি কিছু নাগরিক ও বিদেশিকে গাজায় ধরে নিয়ে যায় তারা।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামাসের হাতে জিম্মিদের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় হামাস ২২৪ জনকে জিম্মি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে জিম্মিদের এই সংখ্যা ২২২ বলে জানিয়েছিল ইসরায়েল।
তবে হামাস এখন পর্যন্ত চারজন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। হামাসের শীর্ষ নেতাদের সাথে কাতারের সরকারি কর্মকর্তাদের এক বৈঠকের পর প্রথমে মার্কিন দুই নাগরিককে মুক্তি দেয় গাজার এই সশস্ত্রগোষ্ঠী। পরে গত সোমবার ৮৫ ও ৭৯ বছর বয়সী ইসরায়েলি দুই নারীকে মুক্তি দেওয়া হয়। বয়স বিবেচনায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানায় হামাস। এই নারীরা ইসরায়েলে ফিরে যাওয়ার পর জিম্মিকালীন হামাসের আচরণে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া বাকি ২২৪ জিম্মির মধ্যে মেক্সিকো, ব্রাজিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং থাইল্যান্ডের পাশাপাশি ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে মিয়া এসচেম নামের ২১ বছর বয়সী ফরাসি-ইসরায়েলি এক তরুণীর ভিডিও গত সপ্তাহে প্রকাশ করে হামাস। ক্যামেরার সামনে কথা বলার সময় তাকে কিছুটা দুর্বল দেখা যায়। মাথা উঁচু করে সোজা হয়ে বসে থাকা এই তরুণী ভিডিওতে বলেন, তিনি আহত হয়েছিলেন। পরে তাকে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের কাছে ফেরার আকুতি জানান এই তরুণী।
গাজায় হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনা শুরু হয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি বলেছেন, হামাসের সাথে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। শিগগিরই এই বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপের আশাপ্রকাশ করেন তিনি।