খেলারপত্র ডেস্ক:
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ৩৩ বছর কেটে গেল কেউ কথা রাখেনি। সুনীলের কথা কেউ না রাখলেও, নাপোলি তার ভক্তদের কথা রেখেছে। ঠিক ৩৩ বছর পর শিরোপা নিয়ে ঘরে ফিরলো দলটি। যে শিরোপার জন্য অপেক্ষায় থেকেছে গোটা একটা প্রজন্ম। কেউ কেউ আক্ষেপ নিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশেও।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ইতালিয়ান সিরি আ'তে উদিনেসের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে নাপোলি। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার পর উদিনে শহর থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরের নেপলসে শুরু হয় বর্ণিল উৎসব। আতশবাজি, রঙের খেলায় মত্ত হলো নেপলসের আসমান-জমিন। এই শিরোপা কত প্রতীক্ষার, কত আরাধ্য তা অন্যরা বুঝবে কীভাবে। দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তাই আতশবাজি নিষিদ্ধ করেছিল পুলিশ। কিন্তু তিন দশক ধরে যে দিনটির অপেক্ষা, সেই দিন সামনে এলে বাধা কেউ শুনবে কেন? বাঁধনহারা উল্লাসে নেপলস এখন উৎসবের নগরী।
ইতালির ফুটবল মানেই মিলান শহরের দুই ক্লাব, তুরিনের বুড়ি জুভেন্টাস। এদের আধিপত্যের মধ্যেও সাহসের বীজ বপন করেছিলেন এক আর্জেন্টাইন জাদুকর। দিয়াগো ম্যারাডোনা নামক সেই জাদুকরের পায়ের ছোঁয়ায় মাটি ফুঁড়ে বীজ থেকে চারা বের হয়। আশির দশকের নাপোলি তো ফুটবল হেরিটেজেরই অংশ হয়েছে ম্যারাডোনার কল্যাণে। সেই তখন, ১৯৮৬-৮৭ ও ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে নেপোলিটানদের ইতালির শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা।
এরপর সময় গড়িয়েছে। ম্যারাডোনা ক্লাব ছেড়েছেন। নাপোলি চলেছে আগের মতো। কতজন এলেন, চেষ্টা করলেন, চলে গেলেন। পারলেন না তৃতীয় শিরোপা জেতাতে। অবশেষে কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তির হাত ধরে নাপোলির নীল জমিনে এলো উৎসবের আবহ। উদিনেসে ম্যাচের আগে লিগের বাকি ছিল ৬ ম্যাচ। নাপোলির প্রয়োজন ছিল ১ পয়েন্ট। অ্যাওয়ে ম্যাচ হলেও ইতিহাসের সাক্ষী হতে নেপলসের মাঠ দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিল ৫০ হাজার দর্শক। ৮ টি বড় পর্দায় সবাই ক্ষণ গুণছিল কখন রেফারি শেষ বাঁশি বাজাবেন। লিগে ৩৩ ম্যাচে ৮০ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন নাপোলি। আগের ম্যাচেই শিরোপা উৎসবের জন্য প্রস্তুত ছিলেন ভক্তরা। বলা চলে আগের ম্যাচকে ঘিরে মানুষের ঢল নেমেছিল দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামে। ভক্তরা চেয়েছিলেন জয় দিয়েই রাঙানো হোক এই উৎসব। কিন্তু সেদিন ড্র করাতে শিরোপা জেতা হয়নি। উদিনিসের মাঠে আর ভুল হয়নি। এই ম্যাচেও ড্র করলেও চ্যাম্পিয়ন হতে বাধার মুখে পড়েনি লুসিয়ানো স্পালেত্তির দল। লিগের বাকি ম্যাচগুলোতে নাপোলিকে পেছনে ফেলার সুযোগ নেই বাকিদের। তাই পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন নাপোলি।
একটি ড্র, ৩৩ বছরের অপেক্ষার অবসান। আনন্দ বাঁধ মানেনি কোনো। কোচ কেঁদেছেন, দর্শকরা কেঁদেছেন। ওপর থেকে ম্যারাডোনাও নিশ্চয়ই গর্ব করেছেন উত্তরসূরিদের নিয়ে। অবশেষে নিজেদের মহানায়ককেও তো শ্রদ্ধা জানানো হলো এতে।