মোস্তাফিজুর রহমান অপু:
বিদ্যমান সংকটময় মুহূর্তে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও একটি প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের নামে তিন কর্মকর্তার বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। জানা যায়, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এতে অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা জানি, বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ব্যয় সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরও স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ইতঃপূর্বে খোদ প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত বিদেশ সফর নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। প্রকল্পের অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তারা যেন অহেতুক বিদেশ সফর না করেন, সে বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না বিদেশ সফর।
জানা গেছে, ‘উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহিষ্ণু প্রকল্পে’র তিন কর্মকর্তার বিদেশ সফরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকেই বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একেই বোধহয় বলা হয় ‘ঋণ করে ঘি খাওয়া’! অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে অথবা অন্যান্য অজুহাতে উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা প্রায়ই বিদেশ সফর করে থাকেন। প্রশ্ন হলো, কর্মকর্তাদের এ ধরনের বিদেশ সফরের কতটা সুফল পায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প? ইতঃপূর্বে আমরা এমন সব বিষয়ে প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের প্রস্তাবের কথা জেনেছি, যেগুলো জনমনে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। বস্তুত প্রায় ক্ষেত্রেই কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর হয়ে থাকে অপ্রয়োজনে অথবা অযৌক্তিক কারণে। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, প্রকল্পের কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে যাবেন না। অত্যাবশ্যকীয় কাজে, প্রশিক্ষণের জন্য, বিশেষ কোনো বিষয়ে কারিগরি বা ব্যবস্থাপনার জ্ঞান আহরণে অথবা কোনো কিছু ক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের বিদেশ সফর করার বিষয়টি যৌক্তিক। তবে এই সংকটময় মুহূর্তে বৈদেশিক অর্থ ব্যয় করে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর যত কম রাখা যায় ততই মঙ্গল। আলোচ্য প্রকল্পের তিন কর্মকর্তার বিদেশ সফরের ব্যয় প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলছেন, একনেকে অনুমোদন হলেও এটি পরবর্তীকালে সংশোধনের সুযোগ আছে। আমরা আশা করি, কোনো প্রকল্পের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।