মোস্তাফিজুর রহমান অপু:
গত ১৯ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো। এতে ৩০ হাজারের মতো সর্তক, গবেষক ও শিক্ষক অংশ নেন। কালো গাউন, টুপি ও টাই পরে অংশ নেন স্নাতক ও গবেষকরা। সমাবর্তনের বিভিন্ন অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের ১৩১ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩ টি স্বর্ণপদক, ৯৭ জনকে পিএইচডি, ২ জনকে বিচিত্র ও ৩৫ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য মোঃ: আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করেন এবং সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২০১৪ সালের নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ জ্যঁ মাসের তিরোল। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সস্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু উচ্চ শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি দেশের যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুও বটে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে রক্তঝরা মুক্তিযুদ্ধ বা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সুতিকাগার এ বিশ্ববিদ্যালয়। সেদিক থেকে চিন্তা করলে দেশের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব তৈরি কারখানাও এ বিশ^বিদ্যালয়। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এসব কথা স্মরণ করে ...সাথে বলেন, গবেষণায় আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখা হতো। সময়ের বিবর্তনে ক্রমেই যেন সেই ঐতিহ্য সংকুচিত হয়ে আসছে। রাষ্ট্রপতি আচার্য মোঃ: আবদুল হামিদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত না হলেও তা কয়েক গুন বেড়েছে। সে তুলনায় শিক্ষার গুনগত মান, গবেষনার পরিমাণ ও মান কতটুকু বেড়েছে বা কমেছে সেটাও মূল্যায়ন করতে হবে। গবেষণার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সব খবর প্রচারিত করা হয় তা দেখলে বা শুনলে অনেক সময় আচার্য হিসেবে তাকে ও লজ্জায় পড়তে হয়। তিনি বলেন, একজন উপাচার্যের মূল দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান, পরিচালনা, মূল্যায়ন ও উন্নয়নকে ঘিরে। কিন্তু ইদানীং পত্রিকা খুললে মনে হয়, পরিবার পরিজন ও অনুগতদের চাকুরী দেওয়া এবং বিভিন্ন উপায়ে প্রশাসনিক ও আর্থিক সুযোগ- সুবিধা নেওয়াই যেন কিছু উপাচার্যের মূল দায়িত্ব। অন্যদিকে অনেক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না নিয়ে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার প্রতি আগ্রহী। যা ছাত্র-শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সাথে খুবই বেমানান বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।
শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে তিনি মনের জোরে সমবর্তন অনুষ্ঠানে এসেছেন বলে মনে করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগামী এপ্রিলে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তাই এ হতে পারে শেষ বারের মতো তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশ গ্রহণ। একসময় শিক্ষকদের কথা শুনলে শ্রদ্ধায় অবণত হতে দেখা যেত সবাইকে। এখন শিক্ষকদের আর সেই ভাবে কেউ ভালো চোখে দেখেন না। কারণ তারা দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে গেছেন। দলীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়ে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন। একই অবস্থা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও তারা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের ব্যাপারে সচেতনতার চেয়ে জাতীয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আমরা আশা করবো রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের কথা গুলো মূল্যায়ন করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের হারানো গৌরব উদ্ধারের চেষ্টা করবেন। আর যারা সমাবর্তিত হলেন, তাদের সেবার জন্য জাতি তাকিয়ে আছে। শিক্ষা সনদ পাওয়ার পর তাদের দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ব বেড়ে গেল। যে ব্যাপারে তারা সচেতন থাকবেন সব সময়। তাদের প্রতি আমাদের অভিনন্দন।