মুস্তাফিজুর রহমান শিহাব:
দীর্ঘদিন ধরে বিপুর সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী এদেশে অবস্থান করছে। এতে নানামুখী সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং যেগুলো দিনদিন ঘনীভূত হচ্ছে। তাদেরকে নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটিও অনেকদিন ধরে আটকে রয়েছে। তবে এর মধ্যে একটি আশার খবর হলো, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি’ নিয়ে একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের মানবিক প্রচেষ্টাকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করার পাশাপাশি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের সব মানবাধিকার ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় এই ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায় আরও সজাগ ও সচেতন হবে, আশা করা যায়। আগামীতে নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে এ ধরনের প্রস্তাব গৃহীত হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজটি অপেক্ষাকৃত সহজ হবে বলা যায়। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে কিনা, সেটাই আসলে মূল প্রশ্ন। এই লক্ষ্য যতদিন না অর্জিত হচ্ছে, ততদিন বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি ফিরে আসবে না। বাংলাদেশ নিজে জনবহুল এবং আর্থসামাজিক নানা সমস্যায় জর্জরিত হওয়া সত্ত্বেও মানবিক বিবেচনায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু মানবিক এ পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।
রোহিঙ্গারা এ দেশে আসায় বহুমাত্রিক সংকট তৈরি হয়েছে। কক্সবাজার এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। বেড়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব। রোহিঙ্গারা মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। এ পরিস্থিতি কেবল আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। এ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য মীমাংসা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এই মীমাংসা হতে পারে একমাত্র রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়ে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করা, যাতে দেশটি তার নাগরিকদের ফেরত নিতে সম্মত হয়। জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত প্রস্তাবের পর বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হোক- এটাই প্রত্যাশা।