পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে নিজের দল পরাজিত হওয়ার পর এই ঘোষণা দেন তিনি। ওই নির্বাচনে তার দল মাত্র ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
সোমবার (১০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের পর নাটকীয় ঘটনার মধ্যে আলেকজান্ডার ডি ক্রু বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বলে রোববার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
ইতালীয় বার্তাসংস্থা এজেনজিয়া নোভার মতে, ফেডারেল নির্বাচনে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে এবং এতে তার দল ওপেন ফ্লেমিশ লিবারেল অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটসের (ওপেন ভিএলডি) উল্লেখযোগ্য পরাজয় হয়েছে। নির্বাচনে দলটি মাত্র ৫.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে এবং এরপরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন আলেকজান্ডার ডি ক্রু।
নির্বাচনে নিজের দলের পরাজয় স্বীকার করে ডি ক্রু বলেছেন, ‘আগামীকাল আমি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করব।’
তবে হতাশাজনক ফলাফল সত্ত্বেও ডি ক্রু উদারপন্থিদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এখনও বেশ আশাবাদী। তিনি বলেছেন, তারা ‘শক্তিশালী। আমরা ফিরে আসব।’
অবশ্য ডি ক্রু পদত্যাগ করলেও নতুন সরকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত তিনি অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং এর ফলে বেসামরিক হতাহতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আওয়াজ তুলেছেন এমন ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে ডি ক্রু অন্যতম।
এদিকে ফ্রান্সে অতি-দক্ষিণপন্থি ল্য পেনের ন্যাশনাল র্যালি, অস্ট্রিয়ায় ফ্রিডম পার্টি অব অস্ট্রিয়া এবং জার্মানিতে অলটারনেটিভ অব জার্মানি (এএফডি) ভালো ফল করেছে। কিন্তু তারা গোটা ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রকে অবিলম্বে বদলে দেওয়ার মতো জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি।
এটা ঠিক, আগের তুলনায় অতি-দক্ষিণপন্থিদের সদস্যসংখ্যা বাড়বে। তারা আরও জোরালোভাবে তাদের মতামত জানাতে পারবেন।
অতি-দক্ষিণপন্থিরা সবচেয়ে ভালো করেছে ফ্রান্সে। তারা প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর দলের থেকে দ্বিগুণ ভোট পেয়েছে। ম্যাক্রোঁর দল পেয়েছে ১৫ শতাংশ ভোট ও ন্যাশনাল র্যালি পেয়েছে ৩০ শতাংশ ভোট। এরপর ম্যাক্রোঁ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ভেঙে দিয়ে আবার নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। ল্য পেন এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
জার্মানিতে চ্যান্সেলর শলৎসের দল এসপিডি তৃতীয় স্থানে আছে। শলৎসের জোটশরিক গ্রিন পার্টিও ১০টি আসন হারাচ্ছে। অতি-দক্ষিণপন্থি এএফডি আছে দ্বিতীয় স্থানে। তবে জার্মানিতে রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ সবচেয়ে বেশি ভোট পাচ্ছে।
মধ্য-ডানপন্থি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস (সিডিইউ)-এর জার্মান বিরোধী দলীয় নেতা ফ্রিডরিশ মার্ৎস বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে তার দলের জয় প্রত্যাশিত। এটা বোঝা যাচ্ছে জার্মান ভোটাররা অবশ্যই পরিবর্তন চায়।
ইতালিতে মেলোনি ও পোল্যান্ডে মধ্যপন্থি নেতা ডোনাল্ড টাস্কের দল ভালো ফল করতে চলেছে। সুইডেন, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডে বামপন্থি ও গ্রিন পার্টি ভালো ফল করেছে। ডেনমার্কে ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা হয়ে গেছে।
পর্তুগালে বিরোধী সোস্যালিস্ট পার্টি আটটি আসনে ৩২ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সাতটি আসনে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিদেশে দূতাবাসে যারা ভোট দিয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে অন্য সবার ভোট গণনা হয়ে গেছে।
চেক প্রজাতন্ত্রে বিরোধী এএনও ২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এক নম্বরে আছে। তারা সাতটি আসনে জয়ী হয়েছে। ২২ শতাংশ ভোট ও ছয়টি আসন পেয়েছে মধ্য-ডানপন্থি জোট এসপিওএলইউ।