কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ নেতা হারদ্বীপ সিং নিজ্জারকে গুলি করে হত্যার ঘটনা নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে ভারত ও কানাডার মধ্যে।
কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) হাউজ অব কমন্সে দাবি করেন, এই শিখ নেতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত সরকার জড়িত আছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন তারা।
ট্রুডোর এমন দাবির পর ভারত-কানাডা প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে কানাডা তাদের দেশে নিযুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ‘র’-এর প্রধানকে বহিষ্কার করে। এর জবাব দিতে ভারতও কানাডার এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। তবে বিষয়টি এখানেই থেমে থাকছে না।
প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে ভারত-কানাডা, কূটনীতিককে দেশ ছাড়ার নির্দেশ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চলমান জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদে তুলবে কানাডা। যেখানে এটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
গত ১৮ জুন দুই মুখোশধারী অজ্ঞাত সন্ত্রাসী ব্রিটিশ কলম্বিয়ার একটি শিখ মন্দিরের সামনে হারদ্বীপকে গুলি করে হত্যা করে।
এই হারদ্বীপ ভারতের ‘পাঞ্জাব প্রদেশকে নিয়ে স্বাধীন খালিস্তান’ প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের অন্যতম বড় নেতা ছিলেন। শিখদের অভিযোগ, স্বাধীন দেশের আন্দোলন করায় ভারত সরকার তাকে হত্যা করেছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ট্রুডো প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে এ ‘গুরুতর’ অভিযোগ আনার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন— যুক্তরাষ্ট্রও যেন এই ঘটনায় ভারতের নিন্দা করে। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন এতে সম্মত হয়নি।
ওয়াশিংটন পোস্ট আরও জানিয়েছে, এরমাধ্যমে একটি বিষয় প্রকাশ পেয়েছে, সেটি হলো— পশ্চিমা দেশগুলো ভারতের সঙ্গে ভূরাজনীতি এবং বাণিজ্য বাড়াতে চায়। সঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীতির সমালোচনা থেকেও দূরে থাকতে চায়।
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, এ বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমারা উভয় সংকটে আছে। তারা কানাডাকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে; আবার একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রভাবশালী মার্কিন এ সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, নয়াদিল্লিতে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জি-২০ জোটের যে শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে সেখানে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সাইডলাইন করে দেওয়া হয়। এমনকি মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে চাইলেও ট্রুডোকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি।
তবে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ট্রুডো জি-২০ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে অবহিত করেন এবং এ ইস্যুটি তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তুলবেন যেখানে; এটি নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, কানাডা বিষয়টি নিয়ে নিজস্ব যে তদন্ত করছে এবং যেভাবে ট্রুডো হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রকাশ করেছেন এতে মার্কিন সরকারের কোনো সমস্যা নেই। তারা চায়, এটির সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং জড়িতরা বিচারের মুখোমুখি হোক।
তবে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়টি উত্থাপিত করেছে তারা। যদিও এ বিষয়টি এখন তদন্তনাধীন আছে, তা সত্ত্বেও এ বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলেছে তারা।