হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি মিডিয়া মুঘল নামে পরিচিত জিমি লাইয়ের বিচার শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন এবং বিদেশি শক্তির সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার হংকংয়ের একটি আদালতে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে শুরু হয় বিচার। এ সময় লাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে তার যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৮০ দিনের মধ্যে শেষ হবে তার বিচার।
৭৬ বছর বয়সী লাই ২০২০ সাল থেকে কারাগারে রয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযোগে ২০২০ সালে হংকংয়ের ২৫০ জনেরও বেশি আন্দোলনকর্মী, আইনপ্রণেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে জিমি লাইও অন্যতম।
চীনের বিশেষ নিয়ন্ত্রণে থাকা হংকংয়ে স্বাধীনতার দাবিতে ২০১৮-১৯ সালে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই আন্দোলন দমন করতে ২০২০ সালে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএল) প্রণয়ন করে বেইজিং। এই আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে আড়াই শতাধিক ব্যক্তিকে।
জিমি লাই চীনে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির একজন সুপরিচিত এবং অগ্রসারির সমালোচক। তার প্রকাশিত দৈনিক অ্যাপল ডেইলি চীনের কমিউনিস্ট পার্টিবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর প্রধান মুখপত্র হিসেবে পরিচিত ছিল।
১৯৪৭ সালে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ গুয়াংঝৌয়ে এক ধনী পরিবারে জন্মেছিলেন জিমি লাই। তার জন্মের ২ বছর পর, ১৯৪৯ সালে কমরেড মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে বেইজিং দখল করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। লাই’র পরিবার কমিউনিস্টবিরোধী হওয়ায় তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়।
দারিদ্রের কারণে মাত্র ১২ বছর বয়সে নৌকায় হংকয়ে পাড়ি জমান লাই। সেখানে প্রথমে একটি গার্মেন্ট কারখানায় কাজ নেন। কারখানাটি প্রধানত সুয়্যেটার প্রস্তুত করত। লাই নিজের চেষ্টায় ইংরেজি শিখেছেন এবং গিওর্দানো নামের একটি আন্তর্জাতিক পোশাক ব্র্যান্ডের মালিক তিনি।
১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ে কমিউনিস্টবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর চীনের সরকারের ট্যাংক চালিয়ে দেওয়ার ঘটনা জিমিকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয় এবং তিনি সিদ্ধান্ত নেন, চীনের বিরুদ্ধে গড়ে উঠতে থাকা আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে কোনো না কোনোভাবে কাজ করবেন তিনি।
তার সেই সিদ্ধান্তের ফসল অ্যাপল ডেইলি। হংকংয়ের শীর্ষ জনপ্রিয় এই দৈনিক পত্রিকাটি ১৯৯৫ সাল থেকে প্রকাশ করা শুরু করেন জিমি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে কট্টর অবস্থান থাকায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পত্রিকাটি হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিদের প্রধান মুখপাত্রে পরিণত হয়।
তবে জিমিকে গ্রেপ্তারের পর ২০২১ সালে অ্যাপল ডেইলি বন্ধ করে দেয় বেইজিং, পত্রিকাটির ২৩ লাখ ডলার সমপরিমাণ সম্পদ জব্দ করে এবং অ্যাপল ডেইলির বেশ কয়েকজন জেষ্ঠ্য সংবাদকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
চীনের পাশাপাশি ব্রিটেনের পাসপোর্টও রয়েছে জিমি লাই’র। সোমবার যখন আদালতে তাকে হাজির করা হয়, সে সময় এজলাসে উপস্থিত ছিলেন লাই’র স্ত্রী তেরেসা লাই ও পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য।
জিমির আন্তর্জাতিক লিগ্যাল টিম জানিয়েছে, আদালতের কাছ থেকে ন্যায় বিচারের তেমন প্রত্যাশা করছেন না লাই। কারণ, মামলার লড়ার জন্য তিনি নিজের পক্ষে একজন ব্রিটিশ আইনজীবীর জন্য আবেদন করেছিলেন, সেই আবেদন বাতিল করেছে বেইজিং।
তাছাড়া যে তিন আইনজীবীকে তার বিচারের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অতীতে চীনা সরকারের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে।