যুক্তরাষ্ট্রে রাত পোহালেই রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশন (আরএনসি)। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় প্রধান দুই দলের একটি রিপাবলিকান পার্টি। দলটির এবারের জাতীয় কনভেনশন আয়োজন করা হয়েছে দেশটির মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলের অঙ্গরাজ্য উইসকনসিনের সবচেয়ে বড় শহর মিলওয়াওকিতে।
এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাইরে রিপাবলিকান ডেলিগেট, গণমাধ্যমকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং দর্শক-ভ্রমণকারী মিলে অন্তত ৫০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে শহরটিতে।
লেক মিশিগানের নীল জলরাশি আর অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়-টিলার এই নান্দনিক শহর ইতোমধ্যেই অতিথিদের বরণ করতে সর্বাত্মক প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন শহরের ডেমোক্র্যাট মেয়র ক্যাভালিয়ার জনসন।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন রোববার মধ্যরাত। আগামীকাল সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা) তিনদিনব্যাপী এই কনভেনশন শুরু হবে। শেষ হবে আগামী ১৮ জুলাই সন্ধ্যায়। কনভেনশনটি মূলত ফিসার ফোরামে অনুষ্ঠিত হবে, যা উইসকনসিন সেন্টার ডিস্ট্রিক্টে অনুষ্ঠিত অতিরিক্ত ইভেন্টের সাথে চলবে। এরমধ্যে রয়েছে- বেয়ার্ড সেন্টার, মিলার হাই লাইফ থিয়েটার এবং ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-মিলওয়াকির (ইউডব্লিউএম) প্যান্থার এলাকা।
কনভেনশন সামনে রেখে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে মিলওয়াকি। বিশেষ করে কনভেনশনস্থলে রয়েছে নজরে পড়ার মতো নিরাপত্তাব্যবস্থা। আশপাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বসানো হয়েছে পুলিশি পাহারা ও চেকপোস্ট। স্থানীয় সময় রোববার সকাল থেকেই সীমিত করা হয়েছে যানবাহন চলাচল।
সংরক্ষিত এলাকায় সারাদিন ওই সীমিত অবস্থার মধ্যে যানবাহন চলাচল করতে পারলেও মধ্যরাতের পর (২টায়) নির্ধারিত যানবাহনের জন্য তা কেবল উন্মুক্ত ছিল। এর আগে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাধারণের চলাচলও সীমিত করে দেওয়া হয়।
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আর্মস্টারডামের মতোই মিলওয়াকির ভেতরেও নৌপথে পর্যটকরা ভ্রমণ করে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। কনভেনশন সামনে রেখে রোববার সকাল থেকে অবশ্য সেই নৌ-সার্ভিস বন্ধ করা হয়েছে।
আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-দলীয় রাজনীতি জমজমাট রূপ নিয়েছে। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট দলের দুই বর্ষীয়ান প্রার্থীর ভোটের লড়াই দেখতে উন্মুখ আমেরিকানরা।
ইতোমধ্যেই এই দুই প্রার্থী একদফা প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে মুখোমুখি অবতীর্ণ হয়েছেন। দেশের সবচেয়ে বড় নির্বাচন হলেও বাংলাদেশের মতো সাধারণ মানুষের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তোলার রেওয়াজ নেই দেশটিতে।
বরং দেশটিতে যে কোনও নির্বাচনে হতে চলেছে সেটি নিয়েও আলোচনা, কর্মীদের মধ্যে উত্তাপ আর সহিংসতা পরিলক্ষিত হয় না। রাস্তাঘাটে নেই রাজনৈতিক আড্ডা-আলাপ। তবে শনিবার পেনসিলভানিয়ায় প্রচারাভিযানে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ভোটারদের পাশাপাশি সারাবিশ্বের রাজনীতি সচেতন মানুষের উৎসাহ যেমন বেড়েছে, তেমনি এই কনভেনশনও ব্যাপক আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
কেননা, এই কনভেনশন থেকে রিপাবলিকানদের আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণার কথা রয়েছে। এ কারণে এই কনভেনশনের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে।
মিলওয়াকির (উইসকনসিন) ১৮৭ বছর বয়সী প্রধান ও জনপ্রিয় দৈনিক “মিলওয়াকি জার্নাল সেন্টিনেল” এর রোববার রাতের অনলাইন মুদ্রণে বলা হয়েছে, কয়েক মাসের প্রস্তুতি শেষে সোমবার ২০২৪ সালের রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলন শুরু হচ্ছে। মিলওয়াওকি এ নিয়ে সার্বিকভাবে প্রস্তুত।
এদিকে গত শনিবারে পেনসিলভানিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে শহরে নাগরিকদের বন্দুক বা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বহনের বিষয় প্রশ্ন উঠেছে। তবে রাষ্ট্রীয় আইনের কারণে কনভেনশনস্থলের কাছে বন্দুক বহন সীমাবদ্ধ করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন শহরের মেয়র ক্যাভালিয়ার জনসন।
তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, রাষ্ট্রীয় আইনের কারণে, যারা বন্দুক বহন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে তাদের জন্য আমরা আরও বিধিনিষেধ তৈরি করতে সক্ষম নই।’
তবে কনভেনশনের সুরক্ষা প্রোটোকলগুলোতে তার শহর আত্মবিশ্বাসী বলেও জানান তিনি।
আরএনসির ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, নিরাপত্তা ইস্যুকে সামনে রেখে এয়ার রাইফেল, পিস্তল, পেইন্টবল গান, ধাতব ও শক্ত পদার্থ, প্লাস্টিক, কাঠসহ ২৬ ধরনের পদার্থ ও জিনিস নিয়ে কনভেনশনে যাওয়া যাবে না। এছাড়া পুলিশ যা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করবে তাও কনভেনশনস্থল বা আশপাশে নেওয়া যাবে না।
রক্তাক্ত হওয়ার পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি আরএনসিতে যোগ দেবেন। সেই অনুযায়ী আগের দিনই তিনি পৌছেছেন মিলওয়াওকিতে। কনভেনশনস্থল সংলগ্ন ওয়াটার স্ট্রিটে অবস্থিত ফাইজার হোটেলে উঠেছেন তিনি।
রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের গাড়িবহর সেখানে পৌঁছায়। এসময় সেখানে তার ভক্ত এবং রিপাবলিকান সমর্থকরা ভিড় করেন। তখন নিরাপত্তার ব্যাপক কড়াকড়ি ছিল। ট্রাম্পকে অবশ্য তার গাড়ি থেকে বের হতে দেখা যায়নি।
এর আগে ৬টার দিকে তিনি মিলওয়াওকি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছান। এরপর ৬টা ৪ মিনিটের দিকে ট্রাম্পের মোটর শোভাযাত্রা স্থানীয় ৭৯৪ ফ্রিওয়ে ধরে হোটেলের দিকে যাত্রা শুরু করে। তখন সড়কেও তাকে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা দেয়। বিশেষ করে সেসময় প্রয়োজনীয় রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ট্রাম্প সোমবার সম্মেলনে উপস্থিত হবেন। এছাড়া ট্রাম্প এখনও তার ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করেননি। এখন সোমবার তার সঙ্গে কেউ মঞ্চে থাকবেন কিনা, সেটি এখনও নিশ্চিত নয় বলে রিপাবলিকান নেতারা জানিয়েছেন। ফলে এ বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে।
কনভেনশনের পর আগামী বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের বক্তৃতা দেওয়ার কথা আছে। তার আগের বক্তৃতার খসড়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতি লক্ষ্য করে লেখা হয়েছিল বলে ট্রাম্পের ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন। তবে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ট্রাম্পের সুরকে বদলে দিয়েছে বলে জানান তারা।
আর এর ফলে ট্রাম্পের মূল বক্তৃতাটি সম্পূর্ণরূপে পুনর্লিখন করা হয়েছে। এখন ট্রাম্প জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। আর ইতোমধ্যে অভিবাসী সম্পর্কে তার পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি ও ঘোষণা ভোটারদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে।