দিন কয়েক আগেই চন্দ্রাভিযানে সাফল্য পেয়েছে ভারত। গত সপ্তাহে দেশটির চন্দ্রযান-৩ চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করে। এর মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ হিসেবে ইতিহাস গড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।
আর এরপরই চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি জানিয়ে অদ্ভুতুড়ে মন্তব্য করেছেন ভারতের এক হিন্দু ধর্মগুরু। শুধু তাই নয়, যে স্থানে চন্দ্রযান অবতরণ করেছে সেই জায়গাটিকে চাঁদের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি জানানো ভারতীয় ওই ধর্মগুরুর নাম স্বামী চক্রপানি মহারাজ। তিনি ভারতের অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভার জাতীয় সভাপতি। হিন্দু এই ধর্মগুরু তার বিতর্কিত ও বিচিত্র নানা মন্তব্যের জন্য পরিচিত।
স্বামী চক্রপানি মহারাজ নামক ওই ধর্মগুরুর দাবি, চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করার পর এবার চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করা হোক এবং যে স্থানে চন্দ্রযানের সফট ল্যান্ডিং হয়েছে, সেই জায়গাটিকে রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করা হোক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভার জাতীয় সভাপতি চক্রপানি রোববার এ বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানান। তার দাবি, অন্য কোনও ধর্ম চাঁদের ওপর মালিকানা ঘোষণা করার আগে যেন সরকার এই দাবি জানায়। এমনকি এই বিষয়ে সংসদে প্রস্তাবনা পাসেরও দাবি করেন তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট এক ভিডিওতে চক্রপানি মহারাজ বলেন, ‘ভারতীয় পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে চাঁদকে হিন্দু সনাতন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হোক। যেখানে চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করেছে, সেই শিবশক্তি পয়েন্টকে রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করা হোক, যাতে কোনও জিহাদি মানসিকতা সেখানে পৌঁছতে না পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও সন্ত্রাসী যেন চাঁদে পৌঁছতে না পারে সে বিষয়ে ভারত সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
উল্লেখ্য, স্বামী চক্রপানি মহারাজ নামের এই ধর্মগুরুর এই ধরনের আজগুবি মন্তব্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালেও করোনা সংক্রমণের সময়ে তিনি গোমূত্র পার্টির আয়োজন করেছিলেন। তার দাবি ছিল, গো-মূত্র পান করলে করোনা সংক্রমণ হবে না।
এমনকি যারা পশুদের জবাই করেন এবং খাবার হিসেবে গ্রহণ করেন তাদের জন্যই করোনাভাইরাস এসেছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।
তারও আগে ২০১৮ সালেও ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় ভয়াবহ বন্যার সময় চক্রপানি বলেছিলেন, যারা গরু খান, তাদের কোনও সাহায্য করা উচিত নয়। এছাড়া বলিউড সিনেমা, ওয়েবসিরিজ, মিউজিক ভিডিওর ওপরে নজরদারি করতে তিনি ধর্ম সেন্সর বোর্ডও তৈরি করেছেন।
প্রসঙ্গত, চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটিতে অবতরণ করায় ভারতের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, অভিনেতা ও সমাজের বিশিষ্ট জনেরা সকলেই অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেখানেই আবার ভারতের নানা প্রান্তের নেতা-মন্ত্রীরা চন্দ্রযান নিয়ে অদ্ভুতুড়ে নানা কথাও বলেছেন।
কেউ চন্দ্রযান-৩ এর ‘যাত্রীদের’ অভিনন্দন জানিয়েছেন। কেউ আবার বলেছেন, চন্দ্রদেবতার আশীর্বাদেই এই অভিযান সফল হয়েছে। আর এবার চাঁদকেই হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি জানালেন বিতর্কিত এই হিন্দু ধর্মগুরু।